নয় ঘন্টার কম ঘুম শিশুদের স্মৃতিশক্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। অনলাইন ভিত্তিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু শিশুদের মানসিক ও মানবিকভাবে বেড়ে উঠতে, ‘কম ঘুম’ একটি বড় বাঁধা।যা ওদের মননশীলতার ক্ষেত্রেও একটি বিরাট প্রতিবন্ধক।
আমাদের দেশের দিকে তাকালেও বলা যায়, এনড্রয়েড ডিভাইস বাচ্চাদের ঘুম কিভাবে দিনকে দিন কেড়ে নিচ্ছে।আগেকার দিনের শিশুকাল আর এখনকার শিশুকালের ভেতর যে বিস্তর ফারাক, সেটা প্রতিটি পরিবারের অভিভাবক – নিজের ও নিজেদের বড় সন্তানের শিশুকালের বেড়ে ওঠার স্মৃতিচারণের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেই বিষয়টি পরিস্কার। বলা হয়, ‘বাড়ির কাজ এবং পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কাজের ভেতর শিশুদের ব্যস্ত শৈশব, ঘুমকে উপেক্ষা করে থাকে। ‘চোখ ঢূলু ঢুলু’ ঘুম আসলেও, শিশুরা আজ ঘুমাতে চায় না। আর অভিভাবক মহলও নিজেদের নিয়ে,নিজেদের কাজের ব্যস্ততায়, শিশুদের হাতে- ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ছেড়ে দেয়। যা একটি শিশুর বিকাশের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতির কারণ।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৯ থেকে ১০ বছর বয়সী ৮,৩০০ শিশুর অধীক শিশুর ওপর এমআরআই মেডিকেল তথ্যচিত্র নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা করেছেন। গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য পুরোপুরি ঘুমের সাথে সম্পর্কিত। এবং পরিমিত ঘুমের অভাবে ওদের বিষন্নতা, উদ্বেগ ও স্মৃতিশক্তি কতটা সমস্যার সন্মুখীন। এছাড়াও আমেরিকান একাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য রাতে ৯ থেকে ১২ ঘন্টা ঘুমানোর পরামর্শ্ প্রদান করেন।সাম্প্রতিক এই সমীক্ষায় প্রাথমিক স্কুলের বাচ্চাদের কথাও তুলে ধরা হয়।যারা প্রতি রাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমেরও কম সময় ঘুমায়। এবং এই কম ঘুমের খেসারত দিতে হয় তাদের মস্তিস্ককে। এরফলে তাদের স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার স্বাভাবিক তারতম্যের চরম অবনতি দেখা দেয়। আর্থ্ সামাজিক অবস্থা, লিঙ্গ, বয়ঃসন্ধি, মস্তিকের উন্নতি, অবনতি, ঘুমের অভ্যেস, সবকিছুই একটি শিশুর স্বাস্থ্য ও সুস্থতার প্রধান নিয়ামক। ফলো-আপ মূল্যায়নে দেখা গেছে, যেই শিশুরা প্রতি রাতে ১২ ঘন্টা ঘুম পূরণ করেনি, সেটা তাদের রেগুলার বা অভ্যাসজনিত একটা রোগের মত উপসর্গ্ হয়ে দাঁড়ায়। এবং রাতজাগা অঘুমো মস্তিস্ক পরের দিন সকালে স্কুলে বা বাসায় লেখাপড়ায় সরাসরি শিশুকে ক্লান্ত করে তোলে। অধ্যয়নে করে তোলে অমনোযোগী। মূলতঃ ৯ ঘন্টার কম ঘুমের শিশুরাই এই তালিকাভুক্ত। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এই শ্রেণীর শিশুদের মস্তিস্কে এক ধরণের ধূসর পদার্থ্’র সন্ধান পাওয়া গেছে। এর পরিণতিই বলে দেয়, কম ঘুম শিশুর দৃষ্টিভ্রম, স্মৃতিশক্তি দুর্ব্ল করার জন্য কতটা দায়ী? গবেষক ‘জে ওয়াং’ শিশুদের মানবিক মানুষরুপে গড়তে খোদ অভিভাবকে সচেতন হতে অনুরোধ করেন। এবং সন্তানদের স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যেস তৈরি করতেও বলেন। আর এই অভ্যেসকে এখন থেকে যদি আমরা গ্রহণ করতে না পারি, সেটা আমাদের অবহেলার বিনিময়ে হতে পারে, শিশুদের জন্য কোন দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ।
পিতামাতাই একমাত্র সন্তানকে যথাযথ ঘুমের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারেন।ঘুমের রাজ্যে প্রযুক্তির ব্যবহারকেও পারেন, সীমিত রাখতে।সন্তানদের সুন্দর স্বাস্থ্য গঠনে সব পিতা মাতারই করণীয়, সন্তানের রাতের ঘুমের একটি উপযুক্ত সুন্দর সময়সূচী নির্ধারণ করা।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি