নানা ধরনের বৈচিত্র্যতায় আর নতুনত্বে শীত অন্যান্য ঋতু থেকে আলাদা। ফ্যাশন থেকে শুরু করে তাই নিত্যদিনের খাবার তালিকাতেও এর উপস্থিতি চোখে পড়ে। শীতের এ সময়ে খাবার তালিকাতে আসে বেশ পরিবর্তন।
খাবার তালিকার কেবল শাক সবজি নয় ফলের দিক থেকে শীতের এ সময়ে দেখা মেলে নানা ধরনের মুখরোচক ফলের।
শীতের এ সময়ে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ফলের সমারোহ অনেকাংশে বেশি দেখা যায়।
শীত এলে কিছু মৌসুমি ফলও চলে আসে বাজারে,দেখা মেলে বরই, জলপাই, আমলকি, সফেদা, কমলালেবু, আপেল আর ডালিমের। এসব ফলে আছে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ‘ই’, এন্টিঅক্সিজেন, ফাইবারসহ আরও অনেক ভিটামিনের। এসব মৌসুমি ফল কেবল মুখরোচকই নয়, এতে থাকা নানা ভিটামিন এবং মিনারেলসহ ফাইবার দাঁত, মাড়ি মজবুত করতে যেমন সাহায্য করে তেমনি নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাইরে থেকে যত্নের পাশাপাশি চাই ভেতর থেকে সুস্থতা। শীতে কিছু ফল আপনাকে সজীবতা ও সুস্থতা দেবে। শরীরে ফাইবার বা আঁশের ঘাটতি মেটাতে ও ভিটামিন ‘সি’র জোগান দিতে শীতের সময় বেশি করে টকজাতীয় ফল খেতে পারেন।
শীতকালীন এরকম কিছু ফলের বিস্তারিত পুষ্টিগুন নিয়ে লিখছি আজঃ
১. বরইঃ
হজমের জন্য এই ফল ভালো। এটি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট-সমৃদ্ধ। ফ্লু, হাঁপানি, কোলন ক্যানসার ও বাতের ব্যথা সারাতে বরই বেশ উপকারী। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টি ও পথ্যবিদ শামছুন্নাহার নাহিদের তথ্য অনুযায়ী, বরইয়ে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ আছে নানা কিছু। রোগ প্রতিরোধে যেমন ভূমিকা রাখে, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। বরই সবার জন্য ভালো হলেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য কিন্তু না। পাকা বরইয়ে চিনি থাকে, তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের পাকা বরই না খাওয়াই ভালো।
২. পেয়ারাঃ
শীতকালেও আপনি বাজারে পেয়ারা পাবেন। স্বাদ, পুষ্টিগুণ আর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখলে পেয়ারা খেলে প্রচুর লাভ। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেয়ারা রাখা যেতে পারে। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ‘সি’ ও লাইকোপেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারি। পেয়ারার বিশেষ পাঁচটি গুণের মধ্যে রয়েছে এটি ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চোখের জন্য ভালো, পেটের জন্য উপকারী আর ক্যানসার প্রতিরোধী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়, যা কমলালেবুর চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। পেয়ারায় আছে ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স। এতে আছে যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড ও নিকোট্রিন অ্যাসিড। বয়সের সঙ্গে জড়িত নানা রোগ, যেমন: স্মৃতিভ্রংশ (আলঝেইমার), চোখে ছানি, আরথ্রাইটিস বা হাঁটুব্যথা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৩. কমলাঃ
পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহারের তথ্য অনুযায়ী, বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে কমলায়। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, সর্দি-কাশি সারায়, মানসিক অবসাদ দূর করে। জ্বর ও ফ্লুর সময় কমলা খাওয়া ভালো। কোয়ার পাতলা ত্বকে আঁশ আছে বলে কোষ্ঠকাঠিন্যও কমাবে। কমলার রসে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ও ক্যালসিয়াম আছে। রক্তশূন্যতা ও জিবের ঘা সারাতেও কমলা উপকারী।
৪. জলপাইঃ
শীতে প্রচুর জলপাই ওঠে বাজারে। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, ‘ই’, লৌহ ও অসম্পৃক্ত চর্বি। ফলে এটি স্থূলতা কমায়, শরীরে উপকারী চর্বি বাড়ায়। বাতের ব্যথা, হাঁপানি উপশমে জলপাই কার্যকরি ভূমিকা রাখে।এছাড়া টক জাতীয় এ ফলে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন-ই। এ ভিটামিনগুলো দেহের রোগজীবাণু ধ্বংস করে, উচ্চরক্তচাপ কমায়, রক্তে চর্বি জমে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে হৃৎপিন্ডের রক্তপ্রবাহ ভাল রাখে। এতে হৃৎপিন্ড থেকে বেশি পরিশোধিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে আঁশ জাতীয় উপাদান। এ আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, কোলনের পাকস্থলির ক্যানসার দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
৫. আমলকীঃ
ভিটামিন ‘সি’তে ভরপুর আমলকী খেলে দাঁত, চুল, ত্বক ভালো থাকে। এটি খাওয়ার রুচি বাড়ায়। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অম্ল, রক্তাল্পতা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে। কমলার তুলনায় আমলকীতে ২০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ আছে।
৬.সফেদাঃ
অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টি উপাদানে ভরপুর খুবই নরম আর তুলতুলে একটি ফল হলো সফেদা। সারা দেশেই ফলটি পাওয়া যায়। দারুন সব পুষ্টিগুণ থাকার কারণে সফেদা স্বাস্থ্যসম্মত। সফেদা চোখের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন `এ` যা চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে থাকা ভিটামিন সি-ও চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। সফেদায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন `সি` থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আর একারণে এটি সর্দি- কাশি সারাতেও দারুন কার্যকরী।
পাকা সফেদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, কপার, আয়রন। এসব খাদ্য উপাদান মেটাবলিক ফাংশন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। সফেদায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়া সফেদা ত্বক।উজ্জ্বল রাখে,চুলের চকচকে ভাব বজায় রাখে।সফেদা কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে রাখে।
৭.ডালিমঃ
ডালিম যদিও আগের মতো পুরোপুরি শীতকালীন ফল নেই আর। প্রায় সারাবছরই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ডালিম। কিন্তু শীতের দেশি ডালিমের আকর্ষণটা বোধহয় একটু আলাদা। এই ডালিম কারো কাছে বেদানা, আবার কারো কাছে আনার নামে পরিচিত। প্রচুর ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই ফল হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে, রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন সি।
এসব ফলের প্রতিটির ই কিছু না কিছু পুষ্টিগুন রয়েছে।প্রত্যেক প্রকারের ফল ই খাওয়া উচিত।সম্ভব হলে এগুলোর মিক্সার বা ফ্রুট সালাদ তৈরি করে খান।এসব ফল আপনার যেভাবে পছন্দ হয় সেভাবেই খান, খাদ্যতালিকা থেকে যেনো বাদ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।বিশেষ করে অল্পবয়সি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভালো বৃদ্ধির জন্য এগুলো খুব উপকারি।শীতকাল হচ্ছে এমন এক সময় যে সময়ে বাজারে এসব মৌসুমি ফল এর পাশাপাশি আরও প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি পাওয়া যায়।এসব খাবার সুস্থ থাকার জন্য খুব দরকারি।তাই এই সময়ে মৌসুমি খাবারে প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।