সাইকেলে বেঁধে দেয় লোহার সিলিন্ডার। এই সিলিন্ডারে রয়েছে ১২ কেজির ঝুঁকিপূর্ণ এলপি গ্যাস। একটু অসাবধানতায় যেই সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতে পারে শিশুটির জীবনাবসান। অথবা ঘটে যেতে পারে- চকবাজার ট্রাজেডীর মত বড় কোন দুর্ঘটনা।
এলপিগ্যাস ব্যবসায়ীরা রোজই এভাবে নানান খাবারের দোকান, হোটেল রেস্তোরা, চায়ের দোকান, আবাসিক ভবনসহ মহল্লার অলি গলিতেও এলপিজি গ্যাসের অর্ডার নিয়ে থাকেন। আর অনলাইনে, ফোনকলে, সরাসরিও সিলিন্ডারে ঠাসা নানান এলপি গ্যাস ভোক্তারা রোজ ক্রয় করে থাকেন। এসব অর্ডারকৃত গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহে ব্যবসায়ী মহল তাদের দোকানে কর্মরত শিশু কিশোরদের ওপরই শতভাগ কিন্তু নির্ভরশীল। দোকানে কাজ করতে আসা শিশু কিশোরেরাই ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে এসব এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার। এবং দুই চাকার এক সাইকেলে সাইকেলে….
তাদের জীবনও যেন দুই চাকার এই সাইকেলের মতন!
তারা জানেই না, তার বাহনে সে কি বহন করে নিয়ে যাচ্ছে? কোনো বাবা বা মা হয়ত অভাবের তাড়নায় মহাজনের হাতে বুকের মানিককে, দোকানে কাজ করার জন্য দিয়ে গেছে। এরপর থেকেই শিশুরা এলপিগ্যাস- মহাজনের ‘অর্ডারের গোলাম’? অনেক ব্যবসায়ীকে শিশু কর্মচারীকে নতুন সাইকেল কিনে দিয়েও এমন ভয়াবহ সিলিন্ডার পরিবহনে আকৃষ্ট করতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি দিনদিন বেড়েই চলেছে বিধায় শহরের বড় রাস্তা, ছোট রাস্তা, সবখানেই এখন এলপি সিলিন্ডার বহনকারী সাইকেলবয় দেখতে পাবেন। বিশেষ করে খাবার হোটেল, চায়ের স্টল, গ্যাসবিহীন বহুতল ভবনে হুটহাট সিলিন্ডার দিয়ে আসতে এদের সার্ভিস এখন জনপ্রিয়। কিন্তু এসব শিশুদের একটু অসর্কতায় যে কি ঘটতে পারে, এটা নিয়ে জনমহলে যতটা ভয় থাকার কথা, তার ছিটেফোঁটাও বলা চলে অনুপস্থিত। অথচ একটু কিশোর হলেই এই শিশুরাই সাইকেলে পরিবহন করছে ২ টি এলপিজির সিলিন্ডার। মানে ২৪ কেজির মত ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় উপাদান! বিষয়টা খুবই কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ। আগেও দেখা গেছে অঘটন ঘটার পর প্রশাসনের ঘুম ভাঙে! যখন আর করার কিছু থাকে না? ব্যবসায়ী মহাজন ঠিকই চড়াদামের এলপিগ্যাস অবুঝ এসব বালকদের দিয়ে বাণিজ্য করে নিচ্ছে দিনের পর দিন। অথচ এসব শিশু কিশোরদের অনেকেই কিন্তু জানে না, “মুনাফালোভী ব্যবসায়ী মহাজন” তার সাইকেলের পেছনে জলজ্যান্ত একটা দাহ্য পদার্থ আঁটসাঁট করে বেঁধে দিয়েছে…
এভাবে এলপিজি বেচাকেনায় ভোক্তা অধিকার আইন আরও কঠোর হওয়া উচিত। ব্যবসায়ীদেরও উচিত অরক্ষিত সাইকেলে এলপিগ্যাস সিলিন্ডার পরিবহন বন্ধ করা। প্রয়োজনে বিকল্প নিরাপদ পরিবহন চালু করা। নগরজীবনে শান্তিপ্রিয়দেরও সেই অনুরোধ।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি