সরকার ভয় পেয়ে দেশজুড়ে আবারও গ্রেপ্তার শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘কোনোকিছুই আমাদের ঠেকাতে পারবে না। আমাদের সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। ইতোমধ্যে বিভাগীয় গণসমাবেশে তার প্রমাণ দেশবাসী দেখছেন।’
আজ রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘গুম আর ক্রসফায়ার শব্দ দুটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমলে কেউ শুনেছে বলে আমার জানা নেই। আসলে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে বোকা মনে করছেন। সে জন্য তিনি ঢালাও মিথ্যা কথা বলেন। আসলে তিনি জনগণের প্রধানমন্ত্রী নন। তিনি আওয়ামী দুষ্কৃতিকারীদের প্রধানমন্ত্রী। র্যাবকে গেষ্টাপো বাহিনীর মতো বানিয়েছে। আজকে তরুণ যুবকরা সবচেয়ে বেশি ভয়ের মধ্যে সময় পার করছে। আর প্রধানমন্ত্রী বলেন তিনি নাকি যুবকদেরকে চাকরি দিয়েছেন! শেখ হাসিনা চান সারাদেশে একটা ভয়ের বার্তা দিতে। যে কারণে তরুণ যুবকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার নিজেদের লোকজন দিয়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ ঠেকাতে ধর্মঘট ডাকেন। আসলে পরিবহন মালিক সমিতির লোকজন নয়, ওরা আওয়ামী সমিতির লোক।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিভাগীয় সদরে গণসমাবেশে মানুষের ঢল দেখে প্রধানমন্ত্রী তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। তার কথাবার্তায় সৌজন্যবোধ দূরে থাক, ন্যূনতম রাজনৈতিক ভদ্রতা প্রকাশ করেননি। গত পরশুদিন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে যে ধরনের বক্তব্য রেখেছেন তা সম্পূর্ণরুপে সুরুচি ও শিক্ষার আলোকবঞ্চিত প্রতিহিংসাপরায়ণ বস্তির মানুষের পক্ষেই সম্ভব। ব্যক্তির ভাষা প্রয়োগের ব্যবহার দেখেই বোঝা যায়-তার পারিবারিক সংস্কৃতি! কোন ধরনের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অশ্লীল, অসভ্য, অশোভন বক্তব্য রাখা যায়।’
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন- ‘আমরা যুবকদের কর্মসংস্থান করেছি, তারা হত্যা করেছে’। অথচ বাংলাদেশ এখন বেকারের কারখানা, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকারের সংখ্যা বাংলাদেশে। শিক্ষিত বেকাররা চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করছে, যুবক-তরুণদের ধরে নিয়ে গিয়ে গুম ও হত্যার যে দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনা রেখেছেন তা বিশ্বের সব স্বৈরাচারের রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলতে চাই- বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার, কিশোর শ্রমিক বিশ্বজিৎ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বক্করসহ অসংখ্য শিক্ষার্থীকে হত্যা, ছাত্রনেতা নুরুজ্জামান জনি, বাপ্পী, আরিফ, মতিউর রহমান এম, ভোলার ছাত্রনেতা নুরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম, মুন্সিগঞ্জের যুবদল নেতা শাওন, নারায়ণগঞ্জের যুবদল নেতা শাওন প্রধান, ছাত্রনেতা অনিক, বেনাপোলের আব্দুল আলীম, গত পরশু বাগেরহাট জেলা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নুরে আলম ভুঁইয়া তানুসহ সারাদেশের জেলায় জেলায় বিএনপি’র অসংখ্য তরুণ নেতাদেরকে আপনার নির্দেশে পুলিশ অথবা র্যাব অথবা যুবলীগ-ছাত্রলীগ হত্যা করেছে। এ সম্পর্কে আপনি আপনার বক্তব্যে কিছু বলেননি প্রধানমন্ত্রী? এ ছাড়াও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী ও সাইফুল ইসলাম হীরু, চৌধুরী আলম, সুমন, মুন্না, জাকির, হুমায়ুন পারভেজসহ অসংখ্য বিএনপি’র আইন প্রণেতা, জনপ্রতিনিধি, অসংখ্য যুবক-ছাত্রকে গুম করার কী জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী?’
তিনি আরও বলেন, ‘গণসমাবেশে মানুষের ঢল দেখে প্রধানমন্ত্রী পাগলের প্রলাপ বকছেন। সমাবেশগুলোতে এত বাধা দিয়েছেন, সমাবেশে যাওয়ার পথে আপনার লালিত যুবলীগ-ছাত্রলীগকে দিয়ে জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যে সহিংসভাবে আক্রমণ চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন, আহতদের অনেকেই এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, এর কী জবাব দিবেন প্রধানমন্ত্রী? যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন বাস-মিনিবাস ধর্মঘট ডাকে না, কিন্তু বিএনপির গণসমাবেশের ৩০-৩২ ঘণ্টা আগে থেকেই ধর্মঘট ডাকা হয়, এটা কার নির্দেশে ডাকা হয়- সেটাও জানে দেশবাসী।’
রিজভী বলেন, ‘বরিশালের গণসমাবেশ শেষ হওয়ার পর থেকে গৌরনদী আগৈলঝাড়ায় বিএনপির মালিকানাধীন ২৮টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। দুইটি এনজিও-কে বন্ধ রাখা হয়েছে, কারণ এই এনজিওগুলো যারা পরিচালনা করেন তারা বিএনপি সমর্থক। সেজন্য সেই এনজিওর মালিকদের চাপ দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকদের পরিচালক করার জন্য, না হলে এনজিও চালাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অপকর্ম ঢাকতে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে যে কুৎসা রটান, সেটি জনগণ জানে। আপনি জনগণকে বোকা বানাতে চাইলেও জনগণ সঠিকটাই উপলব্ধি করে। আপনার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গণসমাবেশগুলোতে জনতার ঢল অভূতপূর্ব। সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও ঢাক-ঢোল বাজিয়ে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘সরকারের হীন মানসিকতার প্রকাশ ঘটছে প্রতিমূহুর্তে। বিএনপির গণসমাবেশগুলোতে জনগণের বিপুল সমাগম দেখে আওয়ামী প্রশাসন দমনের নীল নকশা অনুযায়ী কাজ করছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণে অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য মিজানুর রহমান বাচ্চু, বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, মো. শাহাদাত হোসেন, হাবিবুর রহমান শেখ ওরফে বাবুল, মো. চাঁন মিয়া সরদার, মিজানুর রহমান আকতার, মো. সবুজ, মণ্ডল হোসেন, সৈয়দ হেমায়েত উদ্দিন, শেখ শরিফ উদ্দিন আহমেদ মামুন, মো. রিমন মিয়া, মো. ফারুক, নুর মোহাম্মদ, রায়হান কবির, মো. আক্কাস আলী, আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আলী, মো. ফোরকান সরকার, বশির আহম্মেদ, মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী, মো. রুহুল আমিন, মো. সজীব, মো. আলমগীর হোসেন, মো. নোমান, মো. ফরহাদ আহম্মেদ, মো. মোশারফ, মো. ফারুক প্রমুখ