২০০২ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসে চমক দেখিয়েছিল সেনেগাল। হারিয়ে দিয়েছিল সেবারের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। শুধু এটুকুই নয়, সেবার কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছে গিয়েছিল আফ্রিকার দেশটি। এরপর অবশ্য বিশ্বকাপে সেনেগাল–চমক আর দেখা যায়নি।
লম্বা সময় পর ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে খেললেও পেরোনো হয়নি গ্রুপ পর্বের বাধা। তবে কাতারে এসে আবার চমক দেখাল সেনেগাল। বাঁচামরার ম্যাচে ইকুয়েডরকে ২–১ গোলে হারিয়ে ২০ বছর পর আবার শেষ ষোলোর টিকিট পেল তারা।
সময়ের অন্যতম সেরা তারকাদের একজন সাদিও মানের হাত ধরে বাছাইপর্বের বাধা পেরিয়েছিল সেনেগাল। তবে ব্যালন ডি’অর রানার্সআপকে চোটের কারণে বিশ্বকাপের আগে হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় দলটি। সেই ধাক্কা সামলেই নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে সেনেগাল।
কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ইকুয়েডরকে ১-২ গোলে হারিয়েছে সেনেগাল। এতে বিশ্বকাপের শেষ ১৬ নিশ্চিত করেছে তারা। আজ মঙ্গলবার (২৯শে নভেম্বর) রাত ৯টায় ‘এ’ গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচের একটিতে সেনেগালের মুখোমুখি হয় ইকুয়েডর।
জিতলেই নিশ্চিত দ্বিতীয় রাউন্ড, এমন সমীকরণ সামনে রেখে আজ রাতে খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ইকুয়েডরের মুখোমুখি হয়েছিল তারা। আর ইকুয়েডর ড্র করতে পারলেই চলে যেত পরের রাউন্ডে। শুরু থেকে জমে ওঠে এমন হিসাবের ম্যাচ। খেলার ৮তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ নষ্ট করেন সেনেগালের বুলায়ে দিয়া। গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল বাইরে মারেন এই স্ট্রাইকার।
একটু পর ডি–বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে ফ্রি–কিক পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্ত হয় ইকুয়েডর। দুই দল আক্রমণে চোখ রেখে খেললেও সেনেগাল প্রেস করছিল বেশ গোছানো ও পরিকল্পিতভাবে। গোলের সুযোগ্তও তারা তৈরি করেছিল বেশ। প্রথম ১৫তম মিনিটের মধ্যে ইকুয়েডরের গোল লক্ষ্য করে তিনটি শট নেয় তারা।
এর আগে মুখোমুখি দুই ম্যাচের দুবারই ইকুয়েডরকে হারিয়েছিল সেনেগাল। সেই রেকর্ড ধরে রাখার লক্ষ্যে শুরু থেকে ভালোভাবে ম্যাচে ছিল তারা। আগ্রাসী ফুটবলে ইকুয়েডরকে বেশ চাপেও রাখে তারা। ২৪তম মিনিটেও একবার গোলের কাছাকাছি গিয়ে সুযোগ হাতছাড়া করে সেনেগাল।
ম্যাচে বাঁ প্রান্ত দিয়ে সেনেগালের আক্রমণগুলো বরাবরই বিপজ্জনক হয়ে ওঠছিল। তবে অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে বারবার হতাশ হতে হচ্ছিল তাদের। এর মাঝে কাতারে বিপক্ষে অন্য ম্যাচে নেদারল্যান্ডস এগিয়ে যাওয়ায় সেনেগালের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী পর্বে যেতে তাদের জিততেই হতো।
ইকুয়েডর অবশ্য সেনেগালের চাপ ভালোই সামাল দিচ্ছিল। তবে বেশিক্ষণ আর পারেনি। লাতিন প্রতিপক্ষকে চাপে রেখে ৪২তম মিনিটে ঠিকই পেনাল্টি আদায় করে নেয় সেনেগাল। পেনাল্টি থেকে ঠান্ডা মাথার গোলে তেরেঙ্গা সিংহদের এগিয়ে দেন ইসমালিয়া সার।
বিরতির পর ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামে ইকুয়েডর। অবশ্য আর কোনো উপায়ও যে ছিল না। ম্যাচের ফল বদলাতে না পারলে বিশ্বকাপ যাত্রা যে এখানেই শেষ। দ্রæত একাধিক আক্রমণে গিয়ে সেনেগালকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে ইকুয়েডর।
এগিয়ে থাকা সেনেগালও অবশ্য আক্রমণের ধারা থেকে পিছিয়ে আসেনি। তারাও চেষ্টা করছিল আরেকটি গোল আদায় করে জয়টা নিশ্চিত করার। ফ্রি–কিক থেকে তারা চেষ্টা করেছিল ইকুয়েডরের রক্ষণ ভাঙার।
যদিও মিলছিল না সফলতা। তবে এরপর হঠাৎ করেই জমে ওঠে নাটকীয়তা। মোইসেস কাইসেদোর গোলে ৬৭ মিনিটে সমতায় ফেরে ইকুয়েডর। তবে এই সমতা ৩ মিনিটের বেশি ধরে রাখতে পারেনি তারা। কালিদু কুলিবালির দারুণ এক ভলিতে ফের লিড নেয় সেনেগাল। এরপর ইকুয়েডর চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে না পারলে নিশ্চিত হয় সেনেগালের শেষ ষোলোর টিকিট।