করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই চীনা অর্থনীতি নড়বড়ে হয়ে গেছে। ২০২২ সালের শেষ দিকে জনবিক্ষোভের মুখে জিরো কভিড নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। এরপর জনসম্মুখে প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে নতুন বছর উপলক্ষে একটি টেলিভিশন ভাষণে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে চীন। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস মোকাবেলায় তিনি আরো বেশি সচেষ্ট ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান দেশবাসীর প্রতি। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
কভিডের প্রভাবে চীনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির অর্থনীতি। চীনের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পরপর তৃতীয় মাসের মতো ডিসেম্বরে চীনা কারখানাগুলোর কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে যে ধস নেমেছে তার পরিমাণ ছিল প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগামী কয়েক মাসের জন্য চীনা অর্থনীতির প্রাক্কলনও খুব একটা সুবিধার নয়। কভিডের ফলে শ্রমিক সংকট ও সাপ্লাই চেইনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এমন সম্ভাবনাও দেখছেন বিশ্লেষকরা।
চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, কভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন অভূতপূর্ব অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। পরিস্থিতি ও প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কভিড নীতি বিবেচনা করা হয়েছে। আমাদের এখনো লড়াই করতে হচ্ছে। সবাই অত্যন্ত সংযমী ছিল এবং কঠোর পরিশ্রম করছে। আমাদের সামনে এখন নতুন সকাল। চলুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরো কঠোর পরিশ্রম করি। অধ্যবসায়ের মানে হলো বিজয়। আর ঐক্যের মানেও বিজয়।
২০২০ থেকে জিরো কভিড নীতি বাস্তবায়ন করে আসছিল চীন। ২০২২ সালের শেষ দিকে ওই বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে নজিরবিহীনভাবে রাস্তায় নামেন দেশটির অনেক বাসিন্দা। এরপর ডিসেম্বরের শুরুর দিকে বেশির ভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয় চীন। তখন থেকেই দেশটিতে পুনরায় কভিডের সংক্রমণ বাড়তে দেখা গেছে। করোনা বিধি প্রত্যাহারের পর এটাই শি জিনপিংয়ের কভিড-১৯ সংক্রান্ত বিষয়ের প্রথম বক্তব্য। চীনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবেলায় চিকিৎসা কর্মী, তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাহসী ভূমিকারও প্রশংসা করেছেন জিনপিং।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে চার হাজার মানুষ কভিডে আক্রান্ত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটির ২৯ ডিসেম্বরের তথ্যমতে, চীনে প্রতিদিন নয় হাজার মানুষ করোনায় মারা যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে এক চীনা শীর্ষ মহামারী বিশেষজ্ঞ নতুন বছরের ছুটিতে সমগ্র দেশে কভিড ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান মহামারী বিশেষজ্ঞ উ জুনিউ জানিয়েছেন, বেইজিং, তিয়ানজিন ও মধ্য চীনের চেংডু শহরে সংক্রমণসীমা সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।
এদিকে চীনে কভিড সংক্রমণ বাড়ার ফলে আবার নতুন করে বিশ্বে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় বিভিন্ন দেশ চীন থেকে আসা ভ্রমণকারীদের জন্য কভিড পরীক্ষার নিয়ম চালু করেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ইতালি, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ান। ইংল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চীন থেকে যে যাত্রীরা আসবে তাদের বিমানে ওঠার আগেই কভিড নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে।