বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সাতজন শ্রেষ্ঠ বীরদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ হামিদুর রহমান। আজ দোসরা ফেব্রুয়ারি, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের জন্মদিন। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান বীরশ্রেষ্ঠদের মাঝে সর্বকনিষ্ঠ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
মহান এই বীর, ১৯৫৩ সালের দোসরা ফেব্রুয়ারি তদানিন্তন যশোর জেলার (বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা) মহেশপুর উপজেলার খর্দ্দ খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার নামে বর্তমানে এই গ্রামের নাম হামিদনগর। মোহাম্মদ হামিদুর রহমান শৈশবে খালিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে স্থানীয় নাইট স্কুলে সামান্য লেখাপড়া করেন। এরপর ভর্তি হন সেনাবাহিনীতে। সেনাবাহিনীতে ভর্তির পরই প্রশিক্ষণের জন্য তাকে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে পাঠানো হয়।
২৫শে মার্চের রাতে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ওখানকার আরও কয়েকটি ইউনিটের সমন্বয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। হামিদুর সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল থানার ধলই চা বাগানের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধলই বর্ডার আউটপোস্টে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
তিনি ৪নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে হামিদুর রহমান ১ম ইস্টবেঙ্গলের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন। অক্টোবরের ২৮ তারিখে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সিপাহী হামিদুরসহ ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রেনেড ছোঁড়ার দায়িত্ব দেয়া হয় হামিদুর রহমানকে।
তিনি পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুটি গ্রেনেড সফলভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। গেন অবস্থাতেই তিনি মেশিনগান পোস্টে গিয়ে সেখানকার দুই জন পাকিস্তানী সৈন্যের সাথে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু করেন। এভাবে আক্রমণের মাধ্যমে হামিদুর রহমান এক সময় পাক হানাদারদের মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন।
এই সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হয়। কিন্তু এ হামিদুর রহমান বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেননি। তিনি এর আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ফাঁড়ি দখলের পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হামিদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে।
হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয় ভূখন্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।