ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসেও চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যে দলকে বিশ্বকাপ পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। মরুর বুকে দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসানও ঘটেছে তার পায়ের জাদুতে। খরা কাটিয়ে আর্জেন্টিনার ঘরে উঠেছে ফুটবল বিশ্বকাপের তৃতীয় শিরোপা। এরপর ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে নিজের করে নিয়েছেন গোল্ডেন বল।
কাতার বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করা কিলিয়ান এমবাপের সম্ভাবনাও দেখছিলেন অনেকে। ফরাসি তারকা করিম বেনজেমাও পিছিয়ে ছিলেন না বর্ষসেরা ফুটবলারের তালিকায়। কিন্তু এমবাপে-বেনজেমাদের পাশ কাটিয়ে ২০২২ সালের বর্ষসেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি ‘দ্য বেস্ট’ পুরস্কার হাতে তুলে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি।
এনিয়ে সপ্তমবার বর্ষসেরা ফুটবলার হওয়া লিওনেল মেসির সঙ্গে এবার ফিফার বেস্ট পুরস্কার পেয়েছেন আরও দুই আর্জেন্টাইন। তার মধ্যে সেরা গোলকিপারের পুরস্কার পেয়েছেন আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় বিশ্বকাপ জেতাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখা এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। সেরা কোচের পুরস্কার উঠেছে আলবিসেলেস্তেদের কোচ লিওনেল স্কালোনির হাতে।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় ফ্রান্সের প্যারিসে ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ নামের এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমেই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে স্মরণ করা হয়। এ সময় পেলের বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারের চুম্বকাংশ জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয়। ব্রাজিলিয়ান এক শিল্পী ‘ফুটবলের রাজা’কে উৎসর্গ করে একটি গানও পরিবেশন করেন।
এরপর পারফরমেন্সের পাশাপাশি চলতে থাকে পুরস্কার দেওয়ার কাজ। সবশেষ পুরস্কার হিসেবে ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ঘোষণা করেন ২০২২ সালের বেস্ট ফুটবলারের নাম। এ সময় পাশাপাশি বসা লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপের প্রতি দৃষ্টি ছিল উপস্থিত সবার। তবে বিশ্বকাপের মতো এখানেও শেষ হাসি হাসেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। মঞ্চে উঠেই একগাল হাসিতে সব আলো নিজের করে নেন এলএমটেন। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো হাতে তুলে নেন ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ ট্রফ্রি।
তার আগে ফিফার বর্ষসেরা নারী গোলকিপারের পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় ‘বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’। এবার পুরস্কারটি জিতেছেন ইংল্যান্ডের মেরি আর্পস। এরপর দেওয়া হয় বর্ষসেরা পুরুষ গোলকিপারের পুরস্কার। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ‘গোল্ডেন গ্লোভস’জয়ী এমিলিয়ানো মার্তিনেজ এখানেও বাজিমাত করেছেন। পেয়েছেন ফিফার বর্ষসেরা গোলকিপারের ট্রফি।
এছাড়া ফিফার বর্ষসেরা গোলের জন্য ‘পুসকাস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন পোল্যান্ডের মারচিন ওলেকসি। বর্ষসেরা নারী কোচের পুরস্কার জিতেছেন ইংল্যান্ডের সারিনা উইগমান। পুরুষদের বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার পেয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী কোচ লিওনেল স্কালোনি। ‘ফিফা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছেন জর্জিয়ান লুকা লোশোভিলি। ফিফা ফ্যান অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে আর্জেন্টিনা।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষেই গোলের খাতা খুলেছিলেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি। পোল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ছাড়া ফাইনালের আগ পর্যন্ত বাকি সবকটিতে একটি করে গোল করেন তিনি। লুসাইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জেতা শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে তার পা থেকে এসেছিল জোড়া গোল।
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর পর্দা নামে কাতার বিশ্বকাপের। যে বিশ্বকাপ মেসির ক্যারিয়ারকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছে। আর্জেন্টিনার দীর্ঘদিনের বিশ্বকাপ খরা এবং ব্যক্তিগতভাবে জাতীয় দলের চ্যাম্পিয়ন তকমা না পাওয়ার শুধা সুধা মিটিয়েছেন তিনি।
বিশ্বকাপের ফাইনালে এমবাপে হ্যাটট্রিক করলেও আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয় টাইব্রেকারে। পুরো আসরে মেসি নিজে ৭ গোল করার পাশাপাশি আরও ৩টি গোল করিয়েছেন। পরবর্তীতে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার (গোল্ডেন বুট) জিতেন তিনি।
মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে একটি করে অ্যাসিস্ট করেছিলেন মেসি। এছাড়া, আসরজুড়ে গোলের সুযোগ তৈরিতে ধারাবাহিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন তিনি। সব মিলিয়ে গোলের সুযোগ বানিয়েছিলেন ২১টি।
বর্ষসেরা খেলোয়াড় বেছে নিতে ২০২১ সালের ৮ অগাস্ট থেকে ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া হয়। ভোট দেওয়ার সুযোগ পান ফিফার সদস্য দেশগুলোর জাতীয় দলের কোচ, অধিনায়ক ও নির্বাচিত গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি ফুটবলপ্রেমীরা।
এর আগে আরও তিনজন ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরষ্কার জিতেছিলেন। ব্রাজিলিয়ান রোনালদো লিমা ও ফরাসি ফরোয়ার্ড জিনেদিন জিদান এ পুরষ্কার জিতেন ৩ বার করে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বর্ষসেরা হয়েছেন ৫ বার।