আজ বুধবার থেকে নতুন নিয়মে কাটতে হবে ট্রেনের টিকিট। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধনের পর যাত্রীরা কাটতে পারবেন টিকিট। বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট দেখিয়ে টিকিট কাটতে হবে। আজ ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে এক অনুষ্ঠানে ট্রেনের টিকেট বিক্রির নতুন পদ্ধতি উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এসময় তিনি নতুন নিয়মে টিকেট কালোবাজারি বন্ধ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নতুন এ পদ্ধতি চালু হওয়ায় রেলের টিকেট কাটতে জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্মনিবন্ধন দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর তা নির্বাচন কমিশনে রক্ষিত ডেটাবেজ থেকে যাচাই করা হবে। বিদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট দেখিয়ে টিকেট কিনতে হবে। একজনের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকেট কেটে অন্য কেউ ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
রেলমন্ত্রী আরও বলেন, শুরুতে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে এই প্রক্রিয়া চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে সকল লোকাল ট্রেনেও এ সেবা চালু করা হবে।
তিনি বলেন, আগে একটি টিকেট থাকলেই ভ্রমণ করা যেত। কিন্তু নতুন নিয়মে টিকেট থাকলেই ট্রেনে চড়া যাবে না। যার টিকেট তাকে ভ্রমণ করতে হবে। অন্যের নামে কাটা টিকিটে ভ্রমণ করা যাবে না। যদি কেউ অন্যের টিকিটে ভ্রমণ করে তবে সেটি বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা হয়েছে বলে গণ্য হবে। একইসাথে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে সেই যাত্রীকে জরিমানা দিতে হবে।
এই ব্যবস্থা চালু করায় টিকেট কালোবাজারি বন্ধ হওয়ার আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, টিকেট কালোবাজারি যাতে হতে না পারে, সেক্ষেত্রে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই টিকেট কিনে বেশি দামে বিক্রি করত। এখন যেহেতু যার টিকেট তাকেই ভ্রমণ করতে হবে, সেহেতু কালোবাজারির সুযোগ থাকবে না।
ট্রেনে ভ্রমণ করা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করতে স্টেশনগুলোতে ব্যবস্থা করার কথও বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ হবে। এটিকে ঘিরে দালালচক্র গড়ে ওঠার সুযোগ নেই। এখন থেকে টিকেট কেটে যাত্রা বাতিল করতে চাইলে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়েই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে বলে জানান সুজন। তিনি বলেন, আগে টিকেট কাটার পর যাত্রা বাতিল করতে এবং টাকা ফেরত পেতে রেলওয়ের অফিসে যাওয়া লাগত। কিন্তু নতুন নিয়মে যাত্রীরা ঘরে বসেই টাকা ফেরত পাবেন। আর নতুন এ ব্যবস্থায় নাগরিক তথ্যও সুরক্ষিত থাকবে বলে মন্ত্রী আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সার্ভারের সাথে আমাদের রেলওয়ের সার্ভারের যোগাযোগ রয়েছে। সুতরাং, সকল যাত্রীর নাগরিক তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। একটি নতুন জিনিস বাস্তবায়ন করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে, কিন্তু থেমে গেলে হবে না।
সংবাদ সম্মেলনের আগে মন্ত্রী স্টেশনের টিকেট কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখেন। এসময় তিনি টিকেটপ্রত্যাশীদের কাছে নতুন প্রক্রিয়াটি কেমন হলো তা জানতে চান, নিজেও জানান।
নতুন নিয়মে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি বন্ধ হবে, আশা মন্ত্রীর
এসময় কেউ কেউ নতুন উদ্যোগের প্রশংসা করেন, আবার কেউ কেউ নেটওয়ার্ক না পাওয়া ও সার্ভার জটিলতার কথা মন্ত্রীকে জানান। কেউ কেউ অভিযোগ করেন রেলের সেবা ও কর্মীদের যাত্রীদের সাথে আচরণ নিয়ে।
যেভাবে করবেন নিবন্ধন
১. পুরনো নিবন্ধনকারীর ক্ষেত্রে: অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ লিখে ভেরিফাই বাটনে ক্লিক করতে হবে। তথ্য সঠিকভাবে দেওয়া হলে এনআইডি যাচাই সফল হবে।
২. নতুন নিবন্ধনকারীর ক্ষেত্রে: ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাইন আপ করা যাবে। পাশাপাশি এসএমএসের মাধ্যমেও নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে। এক্ষেত্রে BRNID নম্বর জন্ম তারিখ লিখে পাঠাতে হবে ২৬৯৬৯ নম্বরে।
নিয়মাবলী
৩. ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা বাবা অথবা মায়ের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা রেলওয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টিকেট কাটতে পারবে। এক্ষেত্রে টিকেটের উপরে লেখা নামের সঙ্গে যাত্রীর সম্পর্ক যাচাই করতে ভ্রমণের সময় বাধ্যতামূলকভাবে ওই শিশুকে জন্মনিবন্ধন সনদের অনুলিপি সঙ্গে রাখতে হবে।
৪. তবে এই বয়সীরা জন্মনিবন্ধন সনদ আপলোড করার মাধ্যমে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকেই টিকেট কাটতে পারবে।
৫. বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ও পাসপোর্টের ছবি আপলোডের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে।
৬. ভ্রমণকালে সব ধরনের যাত্রীকে অবশ্যই নিজের এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদের অনুলিপি বা অথবা পাসপোর্ট/ছবি সংবলিত পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
৭. নিবন্ধিত এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কাটতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভ্রমণকালে কেবল টিকেট কাটা ব্যক্তির পরিচয়পত্র থাকলেই চলবে।
৮. পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকেটের উপর মুদ্রিত যাত্রীর তথ্য না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকেটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।