২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ২:২৪
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ২:২৪

সিটি কর্পোরেশনের কর্তারা উপরের লোক, উপরেই উড়ে ! 

বাইক নিয়ে দুটো ছেলে দাঁড়ানো। নাকে হাত। কিন্তু খুব ফেমাস খাবারের রেষ্টুরেন্টের সামনে। বললাম, পাশে নোংরা ও বিশ্রীগন্ধ আর এদিকে তেহারী বিরিয়ানির গন্ধ। কোনটা উপভোগ করছেন ? একজন বলল, খুব বিপদ ভাই। পুরানঢাকায় খেতে আসছিলাম। কিন্তু দুষিত গন্ধে আর বসে খাওয়া হবে না। দেখছেন না পার্সেল অর্ডার দিলাম। সেই রোজার আগে থেকেই এই রোডটা হয়ে আছে ময়লার ভাগার! বললাম, কমিশনার মহোদয়রা কি করেন?  সাথের জন বলল, উনারাতো উপরেই বাতাসে উড়ছে ! মানে ! দেখালো একটা রাজনৈতিক শুভেচ্ছা ব্যানার। যেখানে মেয়র সাহেব থেকে শুরু করে অত্র ওয়ার্ডের সরকার দলীয় বাঘা বাঘা নেতাদের দেখা যাচ্ছে।

কর্তাদের উপরের উড়ার বিষয়টি অবগত হলাম।স্থানীয় ছেলেটাও মৃদু হেসে পুনরায় বলল, নাগরিক জীবন নিয়ে ভাবার সময় নেই তাদের। তারা উপরের লোক তাই উপরেই হাওয়ার তালে উড়ছে …এভাবেই লোকজনের ক্ষোভের মুখে আমিও ভাবছিলাম, এত ঐতিহ্য নগরী। পুরান ঢাকা। সিটি কর্পোরেশনের এত অবহেলাটা সত্যি অসহনীয় যেন ! ওরা বাইক নিয়ে চলে যায়। আমিও অনুসন্ধানী চোখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ! ভাবছি ‘সিটি কর্পোরেশন’ হোল্ডিং ট্যাক্সের (গৃহকরের) সঙ্গে প্রায় ৩ শতাংশ ময়লা-আর্বজনার জন্য কর  নিয়ে থাকে।  তাহলে পুরান ঢাকার এই তল্লাটে নাগরকি সেবা বিপন্ন কেন?

বঙ্গবাজার ও ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর পেরিয়ে সোজা এগিয়ে যাবেন। যে রাস্তা কাজী আলাউদ্দিন রোড নামে পরিচিত। সু-প্রাচীন কাল থেকে পুরান ঢাকাবাসীর প্রাণ বলা চলে এই রাস্তাটি। আশ পাশের সুরিটোলা, নাজিমুদ্দিন রোড ও নাজিরাবাজার। এলাকার গার্ড সাহেব মসজিদের অবস্থানও এখানে। কিন্তু দুঃখের বিষয়। এলাকাটা চরম নোংরা ও ময়লায় ঠাসা। এলাকাবাসীর সু প্রাচীণ কালের  রাস্তাটি আজ যেন ময়লার ডাষ্টবিনের নাম। অবাক করার মত বিষয়; ময়লার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলছে, পুরান ঢাকার নামীদামী নামের লেবাস মার্কা সব খাবার দাবারের প্রতিষ্ঠানগুলো। সবই চলছে এই নোংরা রাজপথে ! সবচেয়ে জনপ্রিয় নামী  ব্রান্ডের খাবারের পসরার সুঘ্রাণ এখন এখানে মৃত। বাসা বাড়ির ময়লা, খাবারের রেস্তোরা, ফুড শপ, জুসবার আর কাচ্চিবিড়িয়ানির দোকানের রোজকার সবজি-তরিতারকারী, ফলফলাদির  দূষিত গলিত ময়লার চরম দুর্ঘন্ধে এদিক দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারীদের আনাগোনায় চরম ভোগান্তির শেষ নেই। আর এখন ভরা বরষা, এরভেতর আম কাঁঠালের গলিত ময়লাতো আছেই।প্রতিবেদনের স্থির দৃশ্যটা দেখেও স্পষ্ট বোঝা যায়, মহল্লাবাসী, মহল্লার কাউন্সিলর সর্বোপরি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সবাই যেন দেখেও আজ ‘অবুঝ মন’ সিনেমার দর্শক ! এলাকার স্থানীয় ওয়ার্ড ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জন্য  এই রাস্তার ওপর এভাবে যত্রতত্র ময়লার স্তুপের পাহাড় বিষয়টা খুবই একটি লজ্জাজনক দৃশ্যপট !

বলা তো যায় না, যে কোন বাইরের দেশের পর্যটক অথবা কোন ফুড ব্লগার যদি এই নাজিমুদ্দিন রোডের খাবারের ওপর কোন কিছু তুলে ধরতে ক্যামেরা নিয়ে ছুটে আসে, সেটা আমাদের জন্য কতটা মঙ্গলজনক হবে ? পুরান ঢাকার ঐতিহ্য তো দুরের কথা, ঢাকা সিটির এমন অবহেলার চিত্রই ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময় ? অথচ এখনও মহল্লার কারও কোন উদ্যোগ কিংবা বিকল্প ব্যবস্থার চিন্তাভাবনার ছিটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না। রাস্তার এক প্রান্তে ময়লা ফেলা হয়। সেটা সন্ধ্যা না হতেই স্তুপাকারে চলে আসছে রাস্তার অন্য প্রান্তে ! প্রতিবেদনের ভাষা কঠিন মনে হলেও- যে কেউ গিয়ে দেখে আসতে পারেন, দেশের খ্যাতনামা হাজী বিড়িয়ানি অথবা বিউটি লাচ্ছির জন্য খাবার প্রেমীরা এমন অস্বাস্থ্যকর অবস্থার ভেতরই কি করে হুমরী খেয়ে পড়ছে। অথচ এই দুটি দোকানই কিন্তু ময়লার স্থানটির ঠিক ওপাশে অবস্থিত।

চরম গরমে গিয়ে আল করিমের ফালুদা খেতে যাবেন। বিকল্প রাস্তা খুঁজে পাবেন না। নাকে মুখে পেটে নোংরা গন্ধ বুকে নিয়ে আপনাকে যেতে হবে, রাস্তার ওপর এই ময়লার ঢিবি পেরিয়েই! আযান হয়েছে। মুসুল্লি পথিক নামাজে যাবেন। ঠিক একই অবস্থা ! মুসুল্লিদেরও চরম কষ্ট করতে হচ্ছে। এই রাস্তার সবচেয়ে সুপ্রাচীন ও ঐতিহাসিক গার্ড সাহেবের মসজিদটিও যে নির্মিত হয়েছে ময়লার স্তুপের ঠিক বিপরীত পাশে। খাবার প্রতিষ্ঠানের দোকান মালিকদের এখানে ময়লা ফেলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, খাবারের প্রায় সব ব্যবসায়ীই কেমন যেন চুপসে যাচ্ছেন। কেননা, এখানে ময়লা ফেলা নিয়ে তাদের নিরবতাটা বোঝা যায়, তাদের সুবিধার বিষয়টাই বেশি জড়িত। কেননা, বেশিরভাগ ময়লা আবর্জনাই এখানে ফেলা হচ্ছে খাবার দাবারের দোকান গুলো থেকেই। আর এলাকার বাসাবাড়ির ময়লা তো সাথে আছেই। খুব অচিরেই এখানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। কেননা, এলাকাটা পুরান ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন ও জনপ্রিয় একটি মহল্লা। এর ঐতিহাসিক অনেক দিকপালও আমাদের আকৃষ্ট করে।

আর এখানের খাবারের রমরমা বাণিজ্য সেটা তো আছেই। এই বাণিজ্যটাও আমরা চাই- স্বাস্থ্যকর পরিবেশেই পুরানঢাকাবাসী  পালন করবেন। যারা মুখরোচক খাবার প্রেমী তাদের সচেতনতারও কোন বিকল্প নেই। পরিবেশ সুন্দর ও নোংরা ময়লামুক্ত হলেই আপনারা খাবার খেতে আসুন। খাবারের দোকানগুলোর নামডাক যতই তকমা লাগানো থাকুক না কেন? আপনার সুস্থ জীবন আপনারই সম্পদ। চলাচলের এই রাস্তাটা ময়লার ডাষ্টবিন মুক্ত করতে না পারলে, দিনদিন খাবার ব্যবসায়ীরা কিন্তু ভোজন রসিকদের হারাবেন সেটা এখন নিশ্চিত বলা যায়।

সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশপূর্ণ পুরান ঢাকার খাবারের পরিবেশ গড়ে তুলতে খাবার ব্যবসায়ীদের সচেতন হতে হবে। সেই সাথে এই রাস্তাটাকে ময়লামুক্ত করতে স্থানীয় কাউন্সিলর মহোদয়কে সাথে নিয়ে যা যা করণীয়, সেভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আর স্থান সংকুলানের বিষয়টি মাথায় রেখে এখানে  সরকারিভাবে একটি ময়লার ভাগার নির্মান করা যায় কিনা,  সেটাও ভেবে দেখা যেতে পারে। অথবা এই রাস্তায় ময়লা ফেলা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে, ভ্যানগাড়ি পদ্ধতিতে নিজস্ব কর্মীর মাধ্যমে বাসা বাড়ি ও দোকানের ময়লা নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে আসার ব্যবস্থাও ইচ্ছে করলে, স্থানীয় কাউন্সিলর মহোদয়ের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ঢাকা দক্ষিণের অন্যান্য ভেতরের এলাকাগুলিতে কিন্তু এই পদ্ধতিতে বাসাবাড়ি দোকানের ময়লা সরানোর পদ্ধতিটি বেশ সফলভাবেই পালিত হচ্ছে।  

মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি

Facebook
Twitter
LinkedIn