সাঈদ ইবনে হানিফ ] ঃ —
দীর্ঘ বছর পরে হলেও নতুন করে বেঁচে থাকার আশা জেগেছে যশোরের ভৈরব নদীর। প্রবাহমান এই নদী টি বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যর ধারক বাহক। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এক সময়ের খরস্রোতা নদীতে পলি জমতে থাকায় বিঘ্নিত ঘটে জোয়ার ভাটার। এই সুযোগে মৃতপ্রায় ভৈরব নদীর বেশির ভাগ অংশে দুই চরের মানুষ শুরু করে ডালচাষ। আর এই কারণেই মূলত ধীরে ধীরে পলি জমে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় জোয়ার ভাটার । একপর্যায়ে যশোরের বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশ বাদী সংগঠন ভৈরব নদ বাঁচাও আন্দোলনের (ব্যানারে) সভা সমাবেশ করতে শুরু করে । জানা গেছে তাদের সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ভৈরব নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে খননকাজের প্রকল্প হাতে নেয় । এই প্রকল্পের আওতায় ভৈরব নদীর অনেক অংশ দখল মুক্ত হয়েছে । ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে নদীর দুই তীরের সৌন্দর্য্য। ইতিমধ্যে খনন কাজ শেষ হওয়ায় নদীতে আবার আগের মত জোয়ার ভাটা প্রবাহমান হচ্ছে। সম্প্রতি জোয়ার ভাটার সুবাদে নদীতে আসতে শুরু করেছে দেশীয় প্রজাতির নানা ধরনের মাছ। ঝাকে ঝাকে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে পুটি, রুই, কাতলা, টেংরা, বাইন, চিংড়ি সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। যেসব মাছ ধরে নদীর তীর বর্তী বাজার গুলোতে সকাল বিকাল বিক্রি করেছেন স্থানীয় জেলেরা। ক্রেতাগন ও এসব মাছ ক্রয় করতে পেরে খুশি হচ্ছে। অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ বছর তারা নদীর মাছ থেকে বঞ্চিত ছিল ।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ী ইউনিয়নের ঘোষনগর ঘুনি বাজারে এবং মাথাভাঙ্গা বাজারে প্রতি দিন সকালে বিক্রি হয় ভৈরব নদী থেকে ধরা দেশি প্রজাতির নানা ধরনের মাছ। আর এই মাছ ক্রয়ের জন্য সেখানে প্রতি দিন ভোর থেকে বিভিন্ন এলাকার মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। এলাকার রাজবংশী জেলে সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ পরিবার পার্শ্ববর্তী ভৈরব নদী থেকে মাছ ধরে তাদের স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ভৈরব নদীর খনন কাজের জন্য তাদের মাছ ধরা একপ্রকার বন্ধ ছিল । কিন্তু সম্প্রতি নদীর বাঁধ গুলো খুলে দেওয়ার কারণে নদীতে আবার জোয়ার ভাটা শুরু হয়েছে এবং নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে । ফলে এক সময়ের মৃতপ্রায় ভৈরব নদীর যেন আবার তার প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে । একই সাথে নদীতে জন্ম হয়েছে নতুন নতুন প্রজাতির মাছ । বাঘারপাড়া উপজেলার দক্ষিণ সীমান্তে ভৈরব নদীর কোলঘেষে অবস্থিত ঘুনি – ঘোষনগর বাজার, এই বাজারে মাছ কিনতে আসা একাধিক ব্যাক্তি জানান, নদীর মাছের স্বাদই আলাদা। তাছাড়া দেশি প্রজাতির মাছ এজন্য দাম একটু বেশি। তবুও নদীর মাছ কিনতে পারছি এতেই আমরা খুশি। মাছ বিক্রি করতে আসা জেলেরা বলেন, বিগত বছরগুলোতে নদী থেকে তেমন কোন মাছ ধরতে না পেরে তাদের সংসার খুব টানাপোড়েনের মাঝে কেটেছে। কিন্তু এখন নদীতে মোটামুটি মাছ ধরা পড়ায় তাদের সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরে এসেছে ।