সন্তানের মুখ দেখতে মুখিয়ে ছিলেন শাহ আলম। পড়ালেখার ইতি টেনে কয়েক বছর আগে ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানির চাকরিতে যোগ দেওয়া শাহ আলমের সে সুযোগ হয়নি। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই ঝরে যায় তাঁর প্রাণ। গত আগস্টে যখন তিনি হাসপাতালে হাসপাতালে মারা যান, তখন তাঁর স্ত্রী ছিলেন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ওই মাসের ২০ তারিখেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। চলতি বছর এমন অগণিত হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী। আর এই সব ঘটনাই এক সূত্রে বাঁধা—ডেঙ্গু।
শীতের শুরুতে এসেও এই ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে দেশ বের হতে পারেনি। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের সব রেকর্ড ওলট–পালট করে দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মানুষ এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, মৃত্যুর রেকর্ডও ছিল অনেক বেশি। এখনো হাসপাতালগুলোতে অনেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ২৩ ডিসেম্বর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ২০ হাজার ২৭২ জন। ঠিক এক বছর আগে ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৮৮৩ জন। এবারের মৃত্যু গত কয়েক বছরের সংক্রমণ ও মৃত্যুকে হার মানায়।
https://googleads.g.doubleclick.net/pagead/ads?client=ca-pub-1009760119214115&output=html&h=250&slotname=5477564097&adk=1970709886&adf=4218674213&pi=t.ma~as.5477564097&w=300&lmt=1704003948&format=300×250&url=https%3A%2F%2Fwww.itvbd.com%2Fhealth%2F121450%2F%25E0%25A6%258F-%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%259B%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25A1%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%2599%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%2597%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25A6%25E0%25A6%2596%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2587-%25E0%25A6%259B%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B2-%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B6&ea=0&wgl=1&uach=WyJXaW5kb3dzIiwiMTAuMC4wIiwieDg2IiwiIiwiMTIwLjAuNjA5OS4xMzAiLG51bGwsMCxudWxsLCI2NCIsW1siTm90X0EgQnJhbmQiLCI4LjAuMC4wIl0sWyJDaHJvbWl1bSIsIjEyMC4wLjYwOTkuMTMwIl0sWyJHb29nbGUgQ2hyb21lIiwiMTIwLjAuNjA5OS4xMzAiXV0sMF0.&dt=1704003948292&bpp=2&bdt=777&idt=196&shv=r20231207&mjsv=m202312070101&ptt=9&saldr=aa&abxe=1&cookie=ID%3D80bd1705409361b6-22667d5467e300d2%3AT%3D1693814993%3ART%3D1704003801%3AS%3DALNI_MZEoccurKjMpIpDjmjOC1MNGHKYYw&gpic=UID%3D00000c3b45871d0e%3AT%3D1693814993%3ART%3D1704003801%3AS%3DALNI_MbUasEiuTOUomO2JymdFm3aOM3rLw&prev_fmts=0x0&nras=1&correlator=4982361910951&frm=20&pv=1&ga_vid=1372948309.1690177103&ga_sid=1704003948&ga_hid=1844003539&ga_fc=1&u_tz=360&u_his=13&u_h=768&u_w=1366&u_ah=728&u_aw=1366&u_cd=24&u_sd=1&dmc=4&adx=477&ady=1479&biw=1349&bih=607&scr_x=0&scr_y=0&eid=44759875%2C44759926%2C31080104%2C44795922%2C95320885%2C31078663%2C31078665%2C31078668%2C31078670&oid=2&pvsid=3346488891266436&tmod=1351101026&uas=0&nvt=1&ref=https%3A%2F%2Fwww.itvbd.com%2Ftopic%2F%25E0%25A6%25B8%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BF&fc=1920&brdim=0%2C0%2C0%2C0%2C1366%2C0%2C1366%2C728%2C1366%2C607&vis=1&rsz=%7C%7CpoeEbr%7C&abl=CS&pfx=0&fu=0&bc=31&td=1&psd=W251bGwsbnVsbCxudWxsLDNd&nt=1&ifi=2&uci=a!2&btvi=1&fsb=1&dtd=204
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। ২০২১ সালে ডেঙ্গুর শনাক্ত বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ২০২২ সালে শনাক্ত আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৩৮২ জনে।
আইইডিসিআরের তথ্য অনুয়ায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১৬৪ জন, ২০২০ সালে ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন, ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছর মৃত্যুর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ১১ হাজারের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এক পর্যায়ে এমনকি ডেঙ্গু থেকে সন্তানদের রক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিও তুলেছিলেন অভিভাবকেরা।
একটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে আতঙ্কের বিষয়টি। গত আগস্টে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১০৭ শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এতে সে সময়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই ঘটনায় অনেক অভিভাবক সন্তানদের জীবন রক্ষার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও সতর্কতামূলক পাঁচটি নির্দেশনা জারি করা হয়।
পরিস্থিতি এমন হয় যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জুলাই মাসে জানানো হয়, মুগদা হাসপাতালে আর ডেঙ্গু রোগী নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সে সময় মুগদায় এক বেডে ২ জন করে রোগী ছিলেন।
অবশ্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগের কমতি ছিল না। অন্তত প্রায় দিন ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে দেখা গেছে মশা মারার ওষুধ হাতে কাউকে না কাউকে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। শেষে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সিঙ্গাপুর থেকে নিয়ে আসা হয় এ ওষুধ। এর আগে এডিস নিধনে জলাশয়ে নোভালরুন ট্যাবলেট, ড্রেনে গাপ্পি মাছ, জলাশয়ে হাঁস ও ডোবায় ব্যাঙ ছাড়ে সিটি করপোরেশন। আবার ড্রোন দিয়ে মশার প্রজননস্থান চিহ্নিত করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এর পাশাপাশি দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়। একই সঙ্গে মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এতে মশার উৎপাত কমেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ২০ হাজার ২৭২। এর মধ্যে ঢাকা সিটির আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯ হাজার ৭৭৬ জন, ঢাকা সিটির বাইরে ২ লাখ ১০ হাজার ৪৯৬ জন। ২০২৩ সালের (২৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৯৩ জন।