বইমেলার দিনলিপি
ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাস। প্রথম দিন থেকেই প্রাণের বইমেলা শুরু হয়েছে। লোক সমাগম ছুটির দিনেই বাড়ছে। দিন যত গড়াচ্ছে। লোকজন বই দেখতে, বই কিনতে আসছে। পরিবার পরিজনের এই প্রাণের মেলা নিয়ে সপ্তাহের বই মেলার খবরা-খবর থাকছে অভিযোগনিউজবিডি২৪ এর নতুন সংযোজনে।
তথ্য সরবরাহে আমাদের সহযোগিতা করছেন- বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ এর পরিচালক ‘সমীর কুমার সরকার’।
বইমেলায় গিয়ে নতুন মোড়কের বই হাতে নিতে পাঠক বইমেলায় যাবেন। আশা করি নতুন পাঠক সৃষ্টিতে আমাদের লেখা সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে। সমীর কুমার সরকারের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা রইলো। ছড়াকার ও লেখক ইমরুল ইউসুফকেও ধন্যবাদ। অনলাইনের পাঠকের সাথে প্রাণের মেলার এই নতুন সেঁতু বন্ধনে আমাদের পাশে আছে বাংলা একাডেমি। বইমেলার দিনলিপিতে আমাদের পাঠককে বই মেলায় আমন্ত্রণ-
৩রা ফেব্রুয়ারি ছিলো অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর ৩য় দিন। এই দিনটি ছিল শিশুপ্রহর। শনিবার মেলার ৩য় দিনে নতুন বই এসেছে ৭৪টি।
বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিশতজন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : মাইকেল মধুসূদন দত্ত শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকউল্লাহ খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খসরু পারভেজ এবং হোসনে আরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা।প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন-বিচার কেবল মননশীল সাহিত্য-সমালোচনার বিষয় নয়, সমগ্র ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্যক্তিসত্তা, সমাজসত্তা ও সৃষ্টিশীলতার জাগরণ এবং সাহিত্যের প্রায় সবগুলো রূপের উন্মেষ ও প্রতিষ্ঠার বহুমুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সাফল্যের ইতিবৃত্ত। নাটক, আখ্যান-কাব্য, গীতিকবিতা, চতুর্দশপদী, পত্র-কাব্য, গ্রিক মহাকাব্যের গদ্যানুবাদ, ইংরেজি রচনা ও চিঠিপত্র মিলিয়ে তাঁর সৃষ্ঠিশীল প্রতিভার প্রকাশরূপ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়িত হয়েছে। তাঁর কিংবদন্তিতুল্য জীবন ও কর্মের সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত রূপ অঙ্কনের প্রয়াস আজও চলমান।
আলোচকবৃন্দ বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন তাঁর যুগের থেকেও অগ্রসর। বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে তিনি এনেছিলেন আধুনিকতার যুগ। রামায়ণের কাহিনিকে অবলম্বন করে রাবণকে নতুনভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। চিরায়ত সাহিত্যের প্রতি তাঁর বিশেষ অনুরাগ থাকলেও তাঁর সাহিত্যে চিরায়ত ও রোমান্টিকতার সহাবস্থান লক্ষ করা যায়। মধুসূদনের ব্যক্তিজীবন ও সাহিত্যজীবনের পাশাপাশি তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়েও গভীরভাবে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাংলা সাহিত্যের আদি আধুনিক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি এমন একজন সৃষ্টিশীল সত্তা যিনি বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, বিভিন্ন ভাষার মৌলিক সাহিত্য পাঠ করেছিলেন এবং নিজস্ব মৌলিকতা সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর এই মৌলিকতাকেই আমরা বলি আধুনিকতা। দ্বিশততম জন্মবর্ষে তাঁকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করা অবশ্যই প্রাসঙ্গিক।
এদিন ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক সালেহা চৌধুরী, লালন গবেষক আবু ইসহাক হোসেন এবং কবি ও প্রাবন্ধিক মামুন মুস্তাফা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। হয়। কবিতা পাঠ করেন- কবি নাসির আহমেদ, তারিক সুজাত, শাহনাজ মুন্নী এবং নাহার মনিকা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মিলন কান্তি দে, শাহাদাৎ হোসেন নিপু এবং আফরোজা কণা। এছাড়া ছিল ঝর্ণা আলমগীর-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং লক্ষীকান্ত হাওলাদার-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শেখ রাসেল ললিতকলা একাডেমি’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, লাইসা আহমেদ লিসা, অনুরাধা মন্ডল, মুহাঃ আব্দুর রশীদ, সঞ্চিতা রাখি এবং পাপড়ি বড়–য়া। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), দেবা পাল (কী-বোর্ড), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং অসিত বিশ্বাস (এসরাজ)।
৪’ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রবিবার। অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর চতুর্থ দিন শেষ হলো। নতুন বই বেরিয়েছে ৬৬টি।
বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : কাঙাল হরিনাথ মজুমদার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তপন মজুমদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাফর ওয়াজেদ এবং আমিনুর রহমান সুলতান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন। আলোচনার শুরুতে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের জীবন ও কর্মভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাউল সংগীতকে সামাজিক জীবনধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মানসে ঊনবিংশ শতকে যে কয়েকজন সাহিত্যসাধক নিজেদের সাহিত্যসম্পদকে নিয়োজিত করেছিলেন কাঙাল হরিনাথ তাঁদের মধ্যে অন্যতম পথিকৃত। কাঙাল হরিনাথ হিরন্ময় প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। কাঙাল হরিনাথের জীবন-দর্শন, আধ্যাত্ম ভাবনা ও মরমি মানসের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর বাউল সংগীতের মধ্যে। এই বাউল সংগীতের কথা ও সুর এবং সহজ-সরল প্রাণস্পর্শী ভাব কী শিক্ষিত আর কী নিরক্ষর, সকলকেই মুগ্ধ করে। আলোচকবৃন্দ বলেন, রুচিশীল ও শিল্পবোধ-সম্পন্ন কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন সৌন্দর্যের পূজারি। আমাদের আবহমান বাংলার লোক-ঐতিহ্যকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন তিনি। সংবাদপত্র ও সাহিত্যকে তিনি শাসক ও শোষকদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি যেমন বাউল গানে অধ্যাত্মবাদের কথা বলেছেন তেমনি সমাজ-সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান।
সভাপতির বক্তব্যে মুনতাসীর মামুন বলেন, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন একইসঙ্গে বিদ্রোহী এবং অধ্যাত্মবাদী। তাঁর কর্মের ব্যাপ্তি ছিল অনেক দূর-বিস্তৃত। সৃজনশীল বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি প্রান্তিক অবস্থানে থেকেও সমাজ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন।
আজ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন চলচ্চিত্রকার ও লেখক তানভীর মোকাম্মেল, শিশুসাহিত্যিক বেণীমাধব সরকার, গবেষক কাজল রশীদ শাহীন এবং কবি ফারুক আহমেদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আনিসুল হক, ফারুক মাহমুদ এবং ঝর্না রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ এবং নায়লা তারান্নুম চৌধুরী। এছাড়া ছিল অনুপম বিশ্বাসের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বেসিক একাডেমি অফ ইয়োগিক এ্যাকুস্টিক ট্রেডিশনাল ইন্সট্রমেন্টে’ এবং মো. সাজেদুল ইসলাম ফাতেমীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নকশিকাঁথা’র সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন, চন্দনা মজুমদার, আব্দুল লতিফ শাহ, আরিফ দেওয়ান এবং সরকার আমিরুল ইসলাম। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), এ কে আজাদ মিন্টু (কী-বোর্ড), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি) এবং শেখ জালাল উদ্দীন (দোতারা)।
আজ ২২শে মাঘ ১৪৩০/৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার। অমর একুশে বইমেলার পঞ্চম দিন। রোজকার মতো আছে আলোচনা অনুষ্ঠান। বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সার্ধশত জন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মাসুদ রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ইসরাইল খান এবং তপন বাগচী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাইফুল আলম।
প্রাণের বইমেলা প্রতিদিন শুরু হয় বিকেল ৩:০০টায়, চলে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি –
ছবিঃ শব্দশিল্প ও সাম্প্রতিক