বইমেলার দিনলিপি
কাল নতুন বই এসেছে ১৭১টি। গতকাল ৪ঠা ফাল্গুন ১৪৩০/১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার। অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর ১৭তম দিন। মেলা শুরু হয় সকাল ১১ টায় এবং চলে রাত ৯ টা পর্যন্ত। সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। সকাল ১০ টায় সকাল বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। ক-শাখায় ১ম হয়েছেন নীলান্তী নীলাম্বরী তিতির, ২য় হয়েছেন রোদসী আদৃতা এবং ৩য় হয়েছেন নৈঋতা ভৌমিক। খ-শাখায় ১ম হয়েছেন তানজিম বিন তাজ প্রত্যয়, ২য় হয়েছেন সুরাইয়া আক্তার এবং ৩য় হয়েছেন রোদসী নূর সিদ্দিকী। গ-শাখায় ১ম হয়েছেন কে. এম. মুনিফ ফারহান দীপ্ত, ২য় হয়েছেন নবজিৎ সাহা এবং ৩য় হয়েছেন সরকার একান্ত ঐতিহ্য। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন সংগীত-ব্যক্তিত্ব শেখ সাদী খান, মোঃ ইয়াকুব আলী খান এবং চন্দনা মজুমদার।
বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : শহীদ সাবের এবং স্মরণ : পান্না কায়সার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে মনির ইউসুফ এবং মামুন সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন গিয়াস উদ্দিন, রতন সিদ্দিকী এবং শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রামেন্দু মজুমদার।
“শহীদ সাবের : আধুনিকতার বেদনা ও মহিম” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মনির ইউসুফ বলেন, শহীদ সাবের তাঁর সাহসী, বেদনাদগ্ধ, সংবেদনশীল, সরল-সুন্দর, গভীর ধ্যানমগ্ন চোখে এই ভূমিকে আত্মস্থ করেছিলেন। মানব-মহত্ত¡ ও মানুষের মুক্তির প্রশ্নে তিনি কখনও আপস করেননি। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও তিনি মানবমুক্তির পথ, মার্কসীয় দর্শন, প্রগতি ও সৌন্দর্যচেতনা আঁকড়ে ধরে ছিলেন। শিল্পের সাধনায় উৎসর্গ করেছিলেন নিজের জীবন। এবং “পান্না কায়সার : দীপান্বিতার অবিরাম পদযাত্রা” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মামুন সিদ্দিকী বলেন, পান্না কায়সার ছিলেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম বাতিঘর। লেখক ও সংগঠক হিসেবে নিজেকে তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ ও উদারনৈতিক চিন্তাধারার মধ্যে দিয়ে পান্না কায়সার তাঁর জীবনব্যাপী সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিলেন।
আলোচকবৃন্দ বলেন, শহীদ সাবের সমাজ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি জীবনের মোহ ত্যাগ করে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন মানুষের মুক্তির জন্য, একটি মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি ছিলেন হৃদয়ের অনুভবে খাঁটি একজন মানুষ। তাঁরা বলেন, সংস্কৃতিমনা পারিবারিক পরিমÐলে বেড়ে ওঠা পান্না কায়সার ছিলেন একজন দৃঢ় প্রত্যয়ী, সৎ, কর্মঠ এবং নারীবাদী মানুষ। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সংগ্রামে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। তাঁর সাহিত্যকর্মে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে উঠেছে প্রধান বিষয়।
সভাপতির বক্তব্যে রামেন্দু মজুমদার বলেন, বিপ্লবী চিন্তাচেতনার অধিকারী শহীদ সাবের মানুষের কল্যাণের জন্য এবং একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। আর পান্না কায়সার ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ একজন সংগ্রামী নারী। তাঁদের আদর্শ, চিন্তাচেতনা ও কর্ম সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে অবহিত করতে হবে।
‘লেখক বলছি ’অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শান্তা মারিয়া, কথাসাহিত্যিক এশরার লতিফ, শিশুসাহিত্যিক আহসান মালেক এবং প্রাবন্ধিক সুমন শামস্। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মিনার মনসুর, হাফিজ রশিদ খান ও আয়শা ঝর্না। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার এবং রফিকুল ইসলাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুথি পাঠ করেন কাব্য কামরুল। এছাড়াও ছিল আবিদা রহমান সেতুর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’ এবং মঙ্গল চন্দ্র মÐলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী জীবন চৌধুরী, মীম বাউল, ঝর্ণা বিশ্বাস, ফারুক হোসেন, নাফিসা ইসলাম ফাইজা, অমিয় বাউল এবং তামান্না নিগার তুলি। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন তুলসী সাহা (তবলা), ডালিম কুমার বড়–য়া (কী-বোর্ড), মো. আতিকুল ইসলাম (বাঁশি), অরূপ কুমার শীল (দোতারা) এবং আকাশ আহমেদ কবির (বাংলা ঢোল)। আজ অমর একুশে বইমেলার ১৮তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩ টায় এবং চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত। আলোচনা অনুষ্ঠান বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : “জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন স্বরোচিষ সরকার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং এম আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কামাল চৌধুরী।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি
তথ্যসেবাঃ সমীর কুমার সরকার,
পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ, বাংলা একাডেমি।