বইমেলার দিনলিপি
একুশে বইমেলার ২২তম দিনে গতকাল নতুন বই এসেছে ৭৮টি। বিকেল থেকে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় এর প্রভাব পড়ে বইমেলা স্টলে আগত পাঠকমহলে। ধুলোবালু সব ধুয়ে দিয়ে অনেক উপকারও করে যায় বৃষ্টি। বৃষ্টি জানে, পাঠক লেখকের আহত হৃদয়ের ধুলো সে সাফ করে দিতে পারবে না। আর পারবে না বলেই, সে উঁকি দিতে যায় বাংলা একাডেমির নিয়মিত আয়োজনেও। অনেকে আকাশের অবস্থা বিবেচনা করে তড়িগড়ি করেই বাড়িতে ফিরে যায়। তারপও প্রাণের মেলায় অনেকে বৃষ্টিতে ভিজেও জুবুথুবু হয়েও মেলায় বিচরণ করেন। মূলতঃ যারা একুশের দিনটিতে ভিড় ভেবে বের হননি পরিবার নিয়ে, এমন অনেক শান্তশিষ্ট পরিবার আজ রোদ মাথায় এসেছিল বইমেলায়। কিন্তু ভাগ্যে ‘বরষা’ মঙ্গল হয়ে ধরা দিলে তো মুখ লুকানোর সুযোগই থাকে না! ভারি বর্ষণ হঠাৎ আসে। মিনিট দশেক একটানা হয়ে আবার হঠাৎই থেমে যায়। তবে মেঘ যেন শীতকে আজ টেনে নিয়ে এসেছে হিমবাহ কাছ থেকে। খুব ঠান্ডা আজ মেলায় আসা জনতাকে কাঁপিয়েই গেছে। বৃষ্টিধারা যেন কবি স্মরণে নেমে আসে বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে। যেখানে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : আসাদ চৌধুরী এবং স্মরণ : জাহিদুল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে মাহমুদা আকতার এবং কামরুল হাসান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দিলারা হাফিজ, বায়তুল্লাহ কাদেরী এবং মনি হায়দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. মুহম্মদ সামাদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, কবি আসাদ চৌধুরী ষাটের দশকের বাস্তবতায় একজন ঐতিহ্যমগ্ন কবি। তাঁর কবিতায় জাতীয়তা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকার-চেতনা নান্দনিক সৌকর্যে প্রতিভাত হয়েছে। যার ফলে তাঁর কবিতার মাঝে শৈল্পিক বোধের সঙ্গে স্বজাতির প্রতি সুগভীর ভালোবাসা মূর্ত হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, বাংলা কবিতার ইতিহাসে কবি জাহিদুল হক আপন প্রতিভায় উজ্জ্বল। তিনি ছিলেন একজন ছন্দসচেতন কবি। ছন্দ ও ধ্বনির ওপর দখল তাঁকে একজন শক্তিমান গীতিকার করে তুলেছিল।
আলোচকবৃন্দ বলেন, সদাবিনয়ী, মিষ্টভাষী কবি আসাদ চৌধুরী গণমানুষের কবি। বাহান্নর চেতনাকে বুকে ধারণ করে স্বদেশের প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে তিনি দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতিকে চিত্রিত করেছেন তাঁর কবিতায়। লোকজীবনের নানা অনুষঙ্গ তাঁর কবিতায় স্থান করে নিয়েছে। অন্যদিকে, বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে কবি জাহিদুল হক তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। কবিতার পাশাপাশি গল্প ও উপন্যাস রচনাতেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। গল্প, কবিতা ও উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর গভীরতম অনুভব ও অনুভূতির অত্যন্ত নিখুঁত ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মুহম্মদ সামাদ বলেন, কবি আসাদ চৌধুরী ও জাহিদুল হক তাঁদের কবিতার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাই তাঁদের কবিতা গণমানুষের ভাষ্য হয়ে উঠেছে।
আজ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শিহাব সরকার, শিশুসাহিত্যিক তপংকর চক্রবর্তী, গবেষক হোসনে আরা এবং কথাসাহিত্যিক মিলটন রহমান।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন : এই মঞ্চে আজ বিকেলে দ্রাবিড় সৈকত রচিত ‘বাংলার চিত্রকলা : ইতিহাসের বিভ্রান্তি এবং মনন-মনীষায় ইউরোপমুখিনতার মর্মভেদ’ এবং ‘ফ্রয়েডিয় লিবিডো-তত্ত্ব এবং তান্ত্রিক দেহাত্মবাদ : সমীক্ষণ ও তুলনামূলক বিচার’ শীর্ষক দুটো বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি নূহ-উল-আলম লেনিন, হাসান হাফিজ, সৌরভ সিকদার, ওবায়েদ আকাশ, মেঘ অদিতি, রুহুল মাহবুব এবং বাবুল আনোয়ার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসিব বিল্লাহ, মাসুম আজিজুল বাসার, জি এম মোর্শেদ, নাঈমা হোসেন এবং অনন্যা রানী সাহা। এছাড়াও ছিল মিলন কান্তি দে’র রচনায় ও নির্দেশনায় ‘দেশ অপেরা’র পরিবেশনায় যাত্রাপালা ‘বঙ্গমাতা’। আজ অমর একুশে বইমেলার ২৩তম দিন। মেলা শুরু হবে সকাল ১১ টায় এবং চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত। সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর। সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে বইমেলার মূলমঞ্চে রয়েছে অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মামুন হুসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ওয়াসি আহমেদ এবং জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি
তথ্যসেবাঃ সমীর কুমার সরকার,
পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ, বাংলা একাডেমি।
ছবি- অনলাইন