২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৩:৪২
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৩:৪২

‘‘ চিলেকোঠার সেপাই ’’ কে অনুধাবন করার হৃদয় তৈরি করতে হবে

বইমেলার দিনলিপি

কাল শুক্রবার ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৩-তম দিন। মেলা শুরু হয় সকাল ১১ টায় এবং চলে রাত ৯ টা পর্যন্ত। ছুটির দিনটিতে নতুন বই এসেছে ১৯৭টি। সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মোঃ হাসান কবীর। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : ক-শাখায় ১ম হয়েছেন ওয়াফিয়া নূর, ২য় হয়েছেন আর্লিন আহমেদ সানভী, ৩য় হয়েছেন তাইফা জান্নাত। খ-শাখায় ১ম হয়েছেন সৌভিক সাহা, ২য় হয়েছেন প্রত্যুষা রায়, ৩য় হয়েছেন শাফিন উদ্দিন আহাম্মেদ। গ-শাখায় ১ম হয়েছেন স্বস্তি চৌধুরী, ২য় হয়েছেন সপ্তনীল হাওলাদার ঐশী, ৩য় হয়েছেন সুয়েত আহমেদ নিহাল। শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : ক-শাখায় ১ম হয়েছেন ফারহিনা মোস্তাক আযওয়া, ২য় হয়েছেন অংকিতা সাহা রুদ্র এবং ৩য় হয়েছেন ফাবলিহা মোস্তাক আরওয়া। খ-শাখায় ১ম হয়েছেন সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ, ২য় হয়েছেন সুবহা আলম এবং ৩য় হয়েছেন অন্বেষা পÐিত এবং গ-শাখায় ১ম হয়েছেন সিমরিন শাহীন রূপকথা, ২য় হয়েছেন আবদুল্লাহ আল হাসান মাহি এবং ৩য় হয়েছেন তাজকিয়া তাহরীম শাশা। শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : ক-শাখায় ১ম হয়েছেন নীলান্তী নীলাম্বরী তিতির, ২য় হয়েছেন রোদসী আদৃতা এবং ৩য় হয়েছেন নৈঋতা ভৌমিক। খ-শাখায় ১ম হয়েছেন তানজিম বিন তাজ প্রত্যয়, ২য় হয়েছেন সুরাইয়া আক্তার এবং ৩য় হয়েছেন রোদসী নূর সিদ্দিকী। গ-শাখায় ১ম হয়েছেন কে. এম. মুনিফ ফারহান দীপ্ত, ২য় হয়েছেন নবজিৎ সাহা এবং ৩য় হয়েছেন সরকার একান্ত ঐতিহ্য।
বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মামুন হুসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ওয়াসি আহমেদ এবং জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। এমন একজন সাহিত্যিককে গতকাল স্মরণ করা হলো। বলে কয়ে মানুষটির সাহিত্যকে একবাক্যে শেষ করা যাবে না। এক কথায় বললে শুধু এটুকুই বলব। প্রাণের তাগিদে আমাদের জন্য এই মহান সাহিত্যিকের যে রচনাবলী তিঁনি রেখে গেছেন। পাঠক মহলে ছড়িয়ে দিতে হবে। এবং সহজ উপায়ে। তবেই চিলেকোঠার সেপাই-কে অনুধাবন করার হৃদয় তৈরি হবে। গতকালের আলোচনায়ও বিষয়টি সুন্দর ভাবে আলোচিত হয়েছে। প্রাবন্ধিক বলেন, আমাদের কালের এক আশ্চর্য-নির্লোভ মানুষ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস চেনা বাস্তবতাকে প্রসারিত করেন প্রচলিত দৃষ্টি ও বুদ্ধিগ্রাহ্যতার ওপারে। আমাদের আদিকল্প, ইন্দ্রজাল, উপকথা তিনি চিনেছিলেন সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে। মধ্যবিত্তের ধসে পড়া সেতুর খোলনলচে দেখতে যেয়ে তিনি আঘাত করেছিলেন মধ্যবিত্তের গোপন পঙ্কিলময় শালীনতা, শুদ্ধতা ও নৈতিকতাকে। ইলিয়াসের মিথ পুরাণগর্ভ থেকে নয়, বরং বরেন্দ্রভূমির দূর অতীতের ইতিহাস থেকে তৈরি হয়। অর্থাৎ ইলিয়াসের ক্ষেত্রে মিথের জন্মভূমি যত না পুরাণের ঐতিহ্য, তার থেকেও বেশি মানুষের জীবনযাপনের অতীত ইতিহাস।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাংলা সাহিত্যের অত্যন্ত শক্তিমান লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্যদর্শন, সংশীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজস্ব চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জানতে হলে তাঁর সাহিত্য পাঠ একান্ত জরুরি। তিনি ছিলেন সংবেদনশীল ও অনুসন্ধিৎসু একজন লেখক। সমাজের নানা দিকে তাঁর সাহিত্যিক দৃষ্টি ছিল প্রসারিত। তিনি তাঁর চিন্তাশীলতার মধ্য দিয়েই একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠেছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বোধ ছিল শানিত, ভাষা ঝরঝরে এবং চিন্তা ছিল স্বচ্ছ। নিরন্তর নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই তাঁর সাহিত্য অনন্য উচ্চতা লাভ করেছে। নবীন পাঠকদের আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্যপাঠে উৎসাহিত করতে হবে।
আজ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক, পর্যটক ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক, কথাসাহিত্যিক নভেরা হোসেন, কবি কুশল ভৌমিক ও শিশুসাহিত্যিক আহমেদ জসিম।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন : এই মঞ্চে আজ বিকেলে পারস্য সাহিত্যের অনুবাদক ও লেখক অধ্যাপক শাকির সবুর রচিত সমকালীন ইরানের কবি ও কবিতা এবং ফারসি থেকে অনূদিত বুজুর্গে আলাভির তার চোখগুলো বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি অঞ্জনা সাহা, নূরুন্নাহার শিরিন, মতেন্দ্র মানখিন, মাসুদুল হক, তিথি আফরোজ, ফিরোজ শাহ, আহমদ জামাল জাফরী, রাজীব কুমার সাহা এবং নাদিরা খানম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী বেলায়েত হোসেন, রুবিনা আজাদ, সায়েরা হাবীব, ঝর্ণা পারুল, তনুশ্রী মল্লিক এবং জেসমিন বন্যা। এছাড়াও ছিল রুবিনা আজাদের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘উদয় দিগঙ্গন’, ফাতেমা-তুজ-জোহরার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গ্রহস্বর’, কাজী মাহতাব সুমনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘পরম্পরায়’ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাঙালি সাংস্কৃতিক বন্ধন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সেলিম চৌধুরী, সন্দীপন দাস, রহিমা খাতুন, লাকী সরকার, প্রত্যাশা চাকমা, ডা. তাপস বোস, মো. বদিয়ার রহমান এবং সিদ্দিক কবির। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন কেশব সরকার (তবলা), রবিন্স চৌধুরী (কী-বোড), মো. মামুনুর রশিদ (গীটার), খোকন বাউলা (দোতারা) এবং আবদুস সোবহান (বাংলা ঢোল)। আজ ১১ই ফাল্গুন ১৪৩০/২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার। অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিন। মেলা শুরু হয়েছে সকাল ১১ টায় এবং চলবে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত বইমেলার শিশুপ্রহর। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : মোহাম্মদ রফিক এবং খালেক বিন জয়েনউদদীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ এবং সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান, আসলাম সানী এবং আমীরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আবুল মোমেন।

মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি

তথ্যসেবাঃ সমীর কুমার সরকার,
পরিচালক: জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ, বাংলা একাডেমি।
ছবি: অনলাইন

Facebook
Twitter
LinkedIn