বইমেলার দিনলিপি
কারণ? বইমলো শেষপ্রান্তে। বিদায় শব্দটি উঁকি দিতেই সবার মনের কোনে একবুক চাপা কষ্ট হাহাকার করে উঠছে। তবু তো তাকে চলে যেতে দিতে হয়। হবে। এইতো আর কয়টা দিনই চলবে। বইমেলা। কাল ছুটির দিনে বইমেলায় প্রাণের তাগিদে পাঠক ছুটে এসেছে। সবার উপস্থিতি দেখেই উপলব্ধি করা যায় মেলা ও আমাদের আবেগ কতটা জড়িয়ে আছে। অনেকেই নিরবে চোখের পানিও ফেলছে। যা আমরা কেউ দেখছি না। সবচয়েে বেশি খারাপ লাগবে প্রতটিা বইয়রে স্টলে বই যারা পাঠকের হাতে তুলে দিচ্ছে। এই ভাইবোনদের কথা বলতেই হয়। সারাটি মাস ধুলোবালি সহ্য করেছে মানুষগুলো। খারাপ লাগবে প্রতিটা স্টলের প্রকাশকবৃন্দের। অনেক প্রকাশক শাররকিভাবে অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। নতুন মলাটের একটি নতুন বই প্রকাশ করতে- এই মানুষগুলোর শাররিক ও মানসকি কষ্টও কিন্তু মিশে আছে। এমনকি স্বকীয় মেধাও জড়িয়ে আছে প্রতিটি বইয়ের শব্দে শব্দে। ভাষার এই মাসজুড়ে। সবার হৃদয় ও মনে। সবাই যে যার ব্যক্তিগত সেলফের তাকে নতুন বই তুলে রাখব। এই মানুষগুলোর ভালবাসার কথা ভুলব না। সব জমা থাকবে হৃদয়ের পাঠাগারে…
গতকাল মেলা শুরু হয় সকাল ১১ টায় এবং চলে রাত ৯ টা পর্যন্ত। সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। নতুন বই এসেছে ১৩৮টি। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : মোহাম্মদ রফিক এবং স্মরণ : খালেক বিন জয়েনউদদীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ এবং সুজন বড়–য়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান এবং আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন আবুল মোমেন।
প্রাবন্ধিক বলেন, কবি মোহাম্মদ রফিকের কবিতার মধ্যে স্মৃতির ভাগই বেশি। স্মৃতি আর কবির চারপাশের সত্তা তাঁর কবিতায় মিলেমিশে আছে। তারুণ্যের প্রথম প্রহরে বামপন্থি রাজনৈতিক সক্রিয়তা আর কৈশোরে সংঘটিত দেশভাগ এবং দেশভাগের ফলে ভিটেমাটি তথা দেশ ছেড়ে মানুষের দেশান্তরী বা বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনার মধ্যে যে বেদনাবোধ নিহিত, সেই বেদনাতুর স্মৃতিই তাঁকে কবিতা রচনায় প্রেরণা দিয়েছে। অন্যদিকে যে কজন শিশুসাহিত্যিক প্রতিভার দীপ্ত আলোয় আমাদের শিশুসাহিত্যকে উদ্ভাসিত করেছেন, খালেক বিন জয়েনউদদীন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মূলত শিশুসাহিত্যিক হলেও তিনি জীবনী-প্রবন্ধ-নিবন্ধ ইত্যাদি রচনার ক্ষেত্রেও রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। লোকসাহিত্যের ঐতিহ্যকে ধারণ করে খালেক বিন জয়েনউদদীন গড়ে তুলেছেন ছড়ার আধুনিক অবয়ব।
আলোচকবৃন্দ বলেন, কবি মোহাম্মদ রফিকের কাব্যভাষায় নিজস্ব স্বর লক্ষ করা যায়, যা তাঁকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছিল। বিশ্বসাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক মোহাম্মদ রফিক তাঁর কবিতায় বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন, পুরাণ-ইতিহাস, জীবন ও জীবনবোধের ছবি এঁকেছেন। অন্যদিকে, খালেক বিন জয়েনউদদীন ছড়া লেখার পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহ্য, বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু বিষয়ে অসংখ্য মননশীল প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবুল মোমেন বলেন, কবি মোহাম্মদ রফিক এবং ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীন তাঁদের সাহিত্যপ্রতিভা দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন। সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে তাঁরা এই দেশ ও গণমানুষের প্রতি তাঁদের অঙ্গীকার পালনের চেষ্টা করেছেন। নুতন প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা ও ইতিবাচক মনোগঠনে তাঁদের সাহিত্যকর্ম অপরিসীম ভূমিকা রাখবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও গবেষক শাহনাজ পারভীন, কবি ও অনুবাদক সাইফুল ভূঁইয়া, কথাসাহিত্যিক শাহনাজ পারভীন স্মৃতি এবং গবেষক মনিরুজ্জামান শাহীন। বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন : এই মঞ্চে আজ বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত, মুহম্মদ মোজাম্মেল হক রচিত মুক্তিযুদ্ধ ও আলোকচিত্র বই বিষয়ে লেখকের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, আশিক আকবর, মাহবুব আজীজ, বীরেন মুখার্জী, আরেফিন রব, কাফি শেখ, সালেহ মুজাহিদ এবং তিথি বালা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নূরুল হাসনাত জিলান, লুৎফুন নাহার লতা, নিমাই মÐল, সাহিত্য ভঞ্জ চৌধুরী। এছাড়াও ছিল আসাদুজ্জামান মান্নার পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘কুষ্টিয়া আবৃত্তি পরিষদ’, মাসুম হুসাইনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘পরম্পরা নৃত্যালয়’, মাহবুব রিয়াজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং হাসান আবদুল্লাহ বিপ্লবের পরিচালনায় ‘ঘাসফুল’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, সালাউদ্দিন আহমদ, সুজিত মোস্তফা, নফিসা মাহজাবিন, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, তাপসী ঘোষ, বর্ণালী সরকার, ফারহানা আক্তার এবং ঝর্ণা রায় ভাবনা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন কাজী মো. ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), রবিন্স চৌধুরী (কী-বোর্ড), মো. হাসান আলী (বাঁশি), ফিরোজ খান (সেতার), বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা)।
আজ রববিার। ১২ই ফাল্গুন ১৪৩০/২৫শে ফেব্রুয়ারি। অমর একুশে বইমেলার ২৫তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩ টায় এবং চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কাজী নূরুল করিম দিলু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন তানভীর নেওয়াজ এবং মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেবুন নাসরীন আহমেদ।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি
তথ্যসেবাঃ সমীর কুমার সরকার
পরিচালক: জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ, বাংলা একাডেমি।
ছবি: অনলাইন