নৃশংস পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৫ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন জায়গায় একযোগে তৎকালীন বিডিআর সদস্যরা বিদ্রোহ করেন। সবচেয়ে বেশি নৃশংসতা চালানো হয় ঢাকায় বিডিআর সদর দপ্তরে।
এ ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদও আছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাকে নৃশংসতম বলে বর্ণনা করা হয়।
সকাল ৯টা ২৭ মিনিটের দিকে বিডিআরের বার্ষিক দরবার চলাকালে দরবার হলে ঢুকে পড়েন এক দল বিদ্রোহী সৈনিক। তাদেরই একজন তৎকালীন মহাপরিচালকের (শাকিল আহমেদ) বুকে বন্দুক তাক করেন। সূচনা হয় ইতিহাসের সেই নৃশংসতম ঘটনার। বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের উপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে পরিবারকে জিম্মি করে ফেলেন জওয়ানরা। পুরো পিলখানায় সৃষ্টি হয় ভীতিকর পরিস্থিতি। চারটি প্রবেশ গেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশপাশের এলাকায় গুলি ছুঁড়তে থাকেন বিদ্রোহীরা।
তারা দরবার হল ও এর আশপাশের এলাকায় সেনা কর্মকর্তাদের উপর গুলি করতে থাকেন। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়তে থাকেন সেনা কর্মকর্তারা। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান হয়। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। পরে পিলখানার ভেতরে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের মরদেহ। ৩৬ ঘণ্টার এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, এক সৈনিক, দুই সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ বিজিবি সদস্য ও পাঁচ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।
বহুল আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় (পিলখানা হত্যা মামলা) ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পিলখানা ট্রাজেডির ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি কোনো মামলার। এ নিয়ে করা দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচার আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ। ২০১১ সালে শুরু হওয়া বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার ঢাকার আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর ছয় বছরে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি হয়নি। তবে এ বছরের মধ্যে আপিল শুনানি শুরু হতে পারে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আসামিপক্ষের প্রত্যাশা, আপিল বিভাগে বিচারক বাড়িয়ে আলাদা বেঞ্চ গঠন করে দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা হবে।