২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ১০:৫০
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ১০:৫০

মহান ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর দীপ্র অবদানকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছে

বইমেরার দিনলিপি


গতকাল ১৩ই ফাল্গুন ১৪৩০/২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার। অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিন চলে গেলো। ছুটির দিন হিসেবে মেলা শুরু হয় বেলা ১২:০০টায় এবং চলে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। প্রচুর নতুন বই এসেছে। বাংলা একাডেমির সূত্রমতে ২৪৬টি বই। কাল বইমেলার নিয়মিত অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলা ভাষা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আরও একটি অনুষ্ঠান। দুপুর ২:৩০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বাংলা একাডেমি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা এ কে এম বজলুর রহমান ফাউন্ডেশনর উদ্যোগে ‘সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসান। সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। বীরমুক্তিযোদ্ধা এ কে এম বজলুর রহমান ফাউন্ডেশনর পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের পরিচালক নাজমুল হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা সংগ্রামী শেখ মুজিব শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রধান বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসান বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল গৌরবজনক। তাঁর উল্লেখ ও স্বীকৃতি ব্যতীত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পূর্ণতা পায় না। বঙ্গবন্ধুর মহাজীবনের আলোচনায় ভাষা আন্দোলনের পর্বটি বহুকাল অনালোচিত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধু শতবর্ষে এ অধ্যায় নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনার পরিসর তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতসহ দেশের সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগে দেশের প্রতিটি নাগরিকের সচেতন অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর দীপ্র অবদানকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছে কিন্তু আজকের তরুণ প্রজন্ম জানে ভাষা আন্দোলনসহ দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ঐতিহাসিক ও অনন্য।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, বাংলা ভাষা-সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূলে রয়েছে মহান ভাষা আন্দোলন, যে আন্দোলনের বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল প্রবাদপ্রতিম। অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে এ আয়োজন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, একই সঙ্গে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের বিষয়টিও বিস্তৃত আলোচনার দাবি রাখে। কারণ বাহান্নর ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের এটিই সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাঙালি সবসময় তাঁদের প্রিয় ভাষার জন্য প্রয়োজনে প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিল। উর্দু ভাষা যখন একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে এদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল তখনই এদেশের মানুষ তার প্রতিবাদ করে এবং রাজপথ রক্তরঞ্জিত করে। ভাষা আন্দোলনের বীর যোদ্ধা স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু এই বাংলা একাডেমিতেই বলেছেন, আমরা যেদিন ক্ষমতায় যাবো সেদিন সর্বস্তরের বাংলা ভাষা চালুর চেষ্টা করবো।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল শিশুকিশোরদের অংশগ্রহণে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : আবুবকর সিদ্দিক এবং স্মরণ : আজিজুর রহমান আজিজ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে ফরিদ আহমদ দুলাল এবং কামরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মামুন মুস্তাফা, তৌহিদুল ইসলাম, মো. মনজুরুর রহমান এবং আনিস মুহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ মান্নান।
প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, বাংলাদেশের স্বনামধন্য বহুমাত্রিক বহুদর্শী কবি-গীতিকার-ছড়াকার-গল্পকার-নাট্যকার-ঔপন্যাসিক আজিজুর রহমান আজিজ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সকল শাখায় সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর লেখা প্রায় শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ষাটের দশক থেকে দীর্ঘ পথচলায় শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিচর্চাসহ লেখালেখির সকল শাখায় ও ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মনিমগ্ন রেখেছিলেন। অন্যদিকে, বাংলা সাহিত্যজগতে কবি আবুবকর সিদ্দিক নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত একটি নাম। তিনি নিজেকে সাম্যবাদী চেতনার একজন লেখক হিসেবে শুধু প্রতিষ্ঠিতই করেননি, বরং জীবনাচারেও একজন সত্যাশ্রয়ী নির্লোভ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে গুরুত্বপূর্ণ কবি এবং প্রভাববিস্তারী কথাসাহিত্যিক।
আলোচকবৃন্দ বলেন, কবি ও সাহিত্যিক আজিজুর রহমান আজিজের লেখালেখির ভুবন বিশাল ও বিস্তৃত। শিল্প-সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তিনি তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর লেখায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পাশাপাশি অধ্যাত্মবাদ, লোকজ অনুভূতি, বাউল দর্শন প্রভৃতি ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। অন্যদিকে কবি আবুবকর সিদ্দিক ছিলেন একজন মহৎ সৃজনশিল্পী। তাঁর কবিতায় স্বদেশপ্রেম, দার্শনিক চিন্তা, বিষাদ, মৃত্যুচিন্তা, মানুষের জীবন ও বেদনার কথা বর্ণিত হয়েছে। শ্রেণিচেতনায় উদ্দীপ্ত গণমানুষের কবি আবুবকর সিদ্দিক আজীবন প্রগতিশীলতার পক্ষে কলম ধরেছেন। বহুমুখী বিষয় ও মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর সাহিত্যকে আলোকিত করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে কবি আসাদ মান্নান বলেন, কবি ও সাহিত্যিক আজিজুর রহমান আজিজ এবং আবুবকর সিদ্দিক তাঁদের সৃজনপ্রতিভা দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। এ দুজন মহান সাহিত্যিকের জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে হলে তাঁদের সাহিত্যকর্ম অবশ্যই পাঠ করতে হবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক সরকার আবদুল মান্নান, কবি ইউসুফ রেজা, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক দিলওয়ার হাসান এবং কথাসাহিত্যিক মোস্তফা তারিকুল আহসান। বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন : এই মঞ্চে আজ বিকেল ৫:০০টায় সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা বিষয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেনÑ সঞ্জীব পুরোহিত, তারেক রেজা, জাহিদ সোহাগ, আফরোজা সোমা, আহমেদ শিপলু, রাদ আহমদ এবং সৈয়দ জাহিদ হাসান। সঞ্চালনা করেন ফারহান ইশরাক ও খালিদ মারুফ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ, শামীম রেজা, রহীম শাহ, নভেরা হোসেন এবং ইমরান পরশ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ম ম জুয়েল, আরিফ হাসান, আলম আরা জুঁই, খোদেজা বেগম। এছাড়া ছিল জয়দুল হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সাহিত্য একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া’, মুশতাক আহমেদ লিটনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আমরা কুঁড়ি’ এবং শাহিনুর আল-আমীনের পরিচালনায় সংগঠন ‘সম্প্রীতি সংস্কৃতি বন্ধন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মোস্তাক আহমেদ, বাউল আব্দুর রহমান, মো. আরিফুর রহমান, আইয়ুব মোহাম্মদ খান, ফারহানা শিরিন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. আলী হোসাইন, মীর তারিকুল ইসলাম, সঞ্জয় কুমার দাস, ঈষিতা বড়ুয়া, মো. শাহীনুর ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন স্বপন কুমার দাস (তবলা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড), মো. হাসান আলী (বাঁশী) এবং অজিত কুমার (দোতারা)।

অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩:০০টায় এবং চলবে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। বিকেল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : সেলিম আল দীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন লুৎফর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন রশীদ হারুন এবং জাহিদ রিপন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।

মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি

তথ্যসেবাঃ সমীর কুমার সরকার
পরিচালক: জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ, বাংলা একাডেমি।
ছবি: অনলাইন

Facebook
Twitter
LinkedIn