২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ৭:২৪
২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ৭:২৪

৬২ হাসপাতালে বসেছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট

করোনা রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়ার জন্য ৬২ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসানো হয়েছে। আরও ৩০টি হাসপাতালে প্লান্ট বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে দেশে অক্সিজেন উৎপাদনের বড় প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ এখনও উৎপাদনে যেতে পারেনি। এজন্য হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। চলতি মাসের শুরুর দিকে লিন্ডে বাংলাদেশের প্লান্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা রোগীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে দেশে এ পর্যন্ত ৭৩৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের ৮০ ভাগই মারা গেছেন অক্সিজেন ঘাটতিজনিত কারণে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া এসব রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী সব ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ফলে তাদের মৃত্যু ঘটে।

এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন-নিপসমের ভাইরোলজিস্ট ডা. জামালউদ্দিন সাইফ যুগান্তরকে বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ হাইপক্সিয়া। অর্থাৎ প্রয়োজনের সময়ে হাই ফ্লো অক্সিজেন না পাওয়া বা যতটা হাইফ্লো অক্সিজেন রোগীর দরকার ছিল ততটা সরবরাহ না করা। অথবা যতটা অক্সিজেন রোগী পেয়েছিল সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু অক্সিজেনের সরবরাহ না থাকলে সেটি দেয়া সম্ভব হয় না।

জানা গেছে, কোভিড-১৯ রোগীদের সুচিকিৎসায় দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ৯০টির বেশি হাসপাতালে বসানো হচ্ছে লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিরবচ্ছিন্ন ও অ্যাবহত রাখতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত ১ জুলাই ২৩টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল গ্যাস পাইপলাইন এবং লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরাসরি ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হয়। এর আগে ২ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৩৯টি সরকারি হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়। মোট ৬২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৫টি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ৫টি বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ১২টি ১০০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ইতোমধ্যে ৬২টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ইউনিসেফের অর্থায়নে দেশের আরও ৩০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট ও লাইন স্থাপনের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যেসব হাসপাতালে ট্যাংক স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে তার মধ্যে মেডিকেল কলেজ রয়েছে- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ট হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো হল- শেখ আবু নাসের স্পেশালাইড হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালগুলো হল- সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, জামালপুর জেলা হাসপাতাল, হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, শেরপুর জেলা হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, নীলফামারী জেলা হাসপাতাল, বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল, বরগুনা জেলা হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতাল, মাগুরা জেলা হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, বগুড়া মোহাম্মদ আলী জেনারেল হাসপাতাল, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল, দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল, বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল। ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালগুলো হল- রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, পিরোজপুর, নড়াইল, লক্ষ্মীপুর, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ঝালকাঠি, ঝিনাইদহ এবং লালমনিরহাট হাসপাতাল।

এছাড়া ইউনিসেফের আর্থিক সহযোগিতায় যে ৩০টি হাসপাতালে গ্যাস পাইপলাইন ও অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে সেগুলো হল- পটুয়াখালী, বি-বাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি, নরসিংদী, শরীয়তপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল। পাবনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই তালিকায় আরও ৯টি হাসপাতাল রয়েছে যেগুলো অন্যান্য তালিকায় বিদ্যমান।

এদিকে ১১ ডিসেম্বর দেশের সবচেয়ে বড় অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডের অক্সিজেন উৎপাদন প্লান্ট নষ্ট হয়ে পড়ে। শুক্রবার সকালে লিন্ডের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত প্লান্টটি হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে। এই প্লান থেকে উৎপাদিত অক্সিজেন সারা দেশে সব হাসপাতালে সরবরাহ করা হতো। এটি ঠিক করতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ দিন লাগবে। এখন বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কোভিড-১৯ মহামারীকালীন লিন্ডে দেশে অবস্থিত হাসপাতালগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। প্রতিদিন গড়ে দেশের হাসপাতালগুলোত ২০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। যার ৯৫ ভাগই লিন্ডে সরবরাহ করে থাকে। অধিদফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, জরুরি অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১২ ডিসেম্বর দুপুরে মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে একটি বৈঠিক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে লিন্ডের প্রতিনিধিরা বিকল্প পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেন।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমরা ওইদিন থেকেই দেশের হাসপাতালগুলোতে বিকল্প পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করি। বর্তমানে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না।

Facebook
Twitter
LinkedIn