ওমেদার খোকন ও পিয়ন হিমেলকে নিয়ে ঘুষের সাম্রাজ্য চালাচ্ছেন আড়াইহাজারের এসি ল্যান্ড কনক
নিজস্ব প্রতিবেদক
মানুষের সেবা প্রদান সহজ করতে বর্তমান সরকার যেখানে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে স্মার্ট ও আধুনিকায়ন করছে, সেখানে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের চরম ভোগান্তিতে ফেলছেন নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা ভূমি অফিসের এসি ল্যান্ড শামসুজ্জাহান কনক। ওমেদার খোকন ও পিয়ন হিমেলসহ কয়েকজন কর্মচারীকে নিয়ে ভূমি অফিসের কার্যক্রমের নামে ঘুষের সাম্রাজ্য চালাচ্ছেন তিনি। ঘুষ লেনদেনের সুবিধার্থে ও বিশ্বস্ততার জন্য অন্যত্র বদলি হওয়া পিয়ন হিমেল ও হেলেনাকে বেআইনিভাবে নিজের কাছে রেখেছেন তিনি। মিসকেস সহকারী বাইজিদ ও কবিরের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে ঘুষের কনট্যাক্ট ও পরে ওমেদার খোকন এবং পিয়ন হিমেল ও হেলেনার মাধ্যমে টাকার লেনদেন করেন ওই এসিল্যান্ড।
তার এই ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়ে। আর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তপূর্বক মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। গত ১৫ এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব তানিয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সূত্রমতে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলার ঈদবারদি (মাষ্টার বাড়ি) গ্রামের বাসিন্দা হাজি আসাদুজ্জামান আড়াইহাজার উপজেলা ভূমি অফিসের এসি ল্যান্ড শামসুজ্জাহান কনকের বিরুদ্ধে নামজারি ও মিসকেসে প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন-আড়াইহাজার উপজেলা ভূমি অফিস একটি অত্যন্ত ব্যস্ততম ভূমি অফিস। এখানে একটি জাপানি ইপিজেডসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। সরকার এখানে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই প্রতিনিয়ত এখানে এই অফিসে মানুষজনকে বিভিন্ন নামজারি ও মিসকেসে-এর জন্য এসিল্যান্ড অফিসে আসতে হয়। কিন্তু এখানকার এসিল্যান্ড একজন চরম ঘুষখোর ও অন্যায়বাজ মহিলা। তার কাছে ঘুষ ছাড় কোন কারবার নেই। তিনি সকল নামজারি ও মিসকেস থেকে প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণ করছেন। এটা যেন এখন এখানে ওপেন সিক্রেট। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। কারন সাধারণ মানুষ এসি ল্যান্ডের কারণে সীমাহিন দূর্ভোগের মধ্যে আছে।
তিনি বলেন, আমরা আড়াই হাজার উপজেলার গরিব অসহায় নিরীহ মানুষ উপজেলার ভূমি অফিসের নামজারি করতে গেলে ভূমি অফিসের এসি ল্যান্ড শামসুজ্জাহান কনকের সর্ব নিম্ন তিন হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জমির পরিমাণ হিসাব করে তার নিয়োগ কৃত ওমেদার খোকনের কাছে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কোনভাবে তার কাছ থেকে নামজারি অনুমোদন করা যায় না। তার ব্যবহার যথেষ্ট ধরনের খারাপ। তিনি সেবা গহিতাকে বসতেও বলেননা। সাধারণ মানুষ নামজারি ভুল হলে মিসকেস রুজু করে উক্ত মিসকেসের রায় পেতে হলে সর্ব নিম্ন দুই লক্ষ টাকা থেকে জমির পরিমাণ হিসাব করে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মিসকেস সহকারি বাইজিদের মাধ্যমে তাকে দিতে হয়। তার লোকজনের কাছ থেকে আরো জানা যায়, নারায়নগঞ্জ জেলার ডিসি এবং বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা-কে ম্যানেজ করে এসিল্যান্ড কনককে এখানে থাকতে হচ্ছে। সম্প্রতি তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অন্যত্র বদলী করা হলেও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার তাকে এখানে রেখে দেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনাকে স্মার্ট আধুনিকায়ন করার এবং মানুষের ধার প্রান্তে মানুষের সেবা প্রদান করা জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু কতিপয় অসৎ অফিসারের কারণে সরকারের বদনাম হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এমতাবস্থায় অসৎ ঘুষখোর অফিসারের হাত থেকে আড়াইজার উপজেলার মানুষদের রক্ষা করার জন্য বিনীত আবেদন জানানো হয়েছে। আলোচিত এই এসিল্যান্ড গত প্রায় এক বছর যাবৎ এই কার্যালয়ে চাকরিরত আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ অভিযোগের অনুলিপি সদয় অবগতির জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকেও প্রদান করা হয়েছে।
এ আবেদনে বর্ণিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য গত ১৫ এপ্রিল ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশনা দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, উপজেলা ভূমি অফিসে এসি ল্যান্ড ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১৪ টি পদ আছে। কিন্তু আড়াইহাজার উপজেলা ভূমি অফিসের এসি ল্যান্ড শামসুজ্জাহান কনক ওমেদার খোকন এবং অন্যত্র বদলি হওয়া পিয়ন হিমেল ও হেলেনাকে নিয়েই মূলত অফিস চালান। সূত্রমতে, পিয়ন হিমেলের মূল পোস্টিং কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। প্রায় দেড় বছর আগে তার বদলি হলেও বেআইনিভাবে তাকে নিজের দপ্তরে রেখেছেন। একইভাবে আরেক পিয়ন হেলেনা বেগমের পোস্টিং দুপ্তারা ভূমি অফিসে। তাকেও বেআইনিভাবে নিজের দপ্তরে রেখে ঘুষ লেনদেনের কাজ চালাচ্ছেন।
ঘুষ লেনদের বিষয়ে জানতে চাইলে এসি ল্যান্ড শামসুজ্জাহান কনককে কয়েকবার (01708442219) কল করার পর ও ফোন রিসিভ করে নাই, যার কারনে তাহার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।