২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / দুপুর ২:২২
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / দুপুর ২:২২

রাসেলস ভাইপার ‘আতঙ্ক’ না ‘গুজব’ ?

ধারাবাহিক : বিশেষ প্রতিবেদন-০১

সোস্যাল মিডিয়ায় এই সাপটি নিয়ে আলোড়নের ঝড় তোলা কনটেন্ট ক্রিয়েটর আর সংবাদ মাধ্যমই ভালো বলতে পারবে। জনমনে ভয় সৃষ্টি করার যে মিশন। বলা চলে পুরোপুরি ব্যর্থ নেট দুনিয়ার রিউমাররা। কেননা, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ‘রাসেলস ভাইপার’ আতঙ্কের চেয়ে এখন বিরক্তই প্রকাশ করছেন বেশি। যতই ভয়ের খবর হোক। গুজবই হোক। যে কোন সাপ নিয়ে আমরা কি যথেষ্ঠ রকমের সচেতন। আমরা কি সতর্ক? দিনশেষে ফেসবুকে এক সাপ নিয়েই পড়ে থাকা জাতি আমরা!
সাপটিকে নিয়ে এত ভয়ের কারণ হলো সাপটি খুব ভয়ানক। প্রাণঘাতী। ডিসকভারী, ন্যাশনাল জিওগ্রাফী চ্যানেলের সুবাদে সবাই সাপটিকে বিদেশী সাপ বলেই ঠাওর করতাম। সবাই মনে করতাম, সাপটি ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের বালুময় দ্বীপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অববাহিকাতেই ভরপুর। এখন যে রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের মতো জেঁকে বসবে, তা কে জানত? অনেকে বলেন, সাপটি আমাদের বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সাপ। যার নাম উলুবোড়া বা চন্দ্রবোড়া। একশত বছর পূর্বেও নাকি এই চন্দ্রবোড়া বাংলার জমিনে বিরাজমান ছিলো। মাঝখানে কোথায় যে হারিয়ে যায়! তা কেউ বলতে পারে না। শতবর্ষী এই রাসেলস ভাইপার হয়েই সে পুনরায় ফিরে এসেছে, তার প্রিয় বাংলাদেশে। এবং মহা প্রতাপে দেশবাসীর কাছে একটি আতঙ্কের নাম হয়েই!
ব্যতিক্রমী বিষের অধিকারী এই ভয়ঙ্কর সাপটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এখন মেহমান সাপ। একটি বিরল প্রজাতির সাপ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে অতি দ্রুততার সাথে সাপটি ছড়িয়ে পড়ার যে গুঞ্জন, এখান থেকেই মানুষের ভিতর রাসেলস ভাইপার আতঙ্কের শুরু। চলছে জল্পনা কল্পনা ও গবেষণা। এতদিন লুপ্ত প্রায় চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া খ্যাত আমাদের রাসেলস ভাইপার। আল্লাহ্’র দুনিয়ায় এত দেশ বিদেশ থাকতে এই সাপ বাবাজী একদম কৃষিপ্রধান দেশটিকেই কি লাইক করে বসল। সে কারণেই বুঝি ফেসবুকে তাকে নিয়ে যত কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে সবই লাইকের জোয়ারে যেন ভেসে যাচ্ছে! ২০১৩ সালে এই সাপের কামড়ের রোগী বাড়তে থাকলে, ভারত থেকে এন্টিভেনম বা প্রতিশেধক আনা হয়। এরপর ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালেও চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপারের আনাগোনা ছিল দেশে। তখন তো নেট দুনিয়ার এতটা প্রচলন ছিল না। সে কারণেই হয়ত কালের গর্ভে এক প্রকার হারিয়েই যায় সাপটি। এতদিন ছিল পুরোই বিলুপ্তির খাতায়। এখন সাপটির কামড় নিয়ে যত’না শঙ্কা, বেশি চিন্তার ভাজ দেখা যাচ্ছে এর ছানাপোনা নিয়ে। কেননা, মারাত্মক রক্ষণশীল সাপটি ডিম পারে না। সরাসরি বাচ্চা দিয়ে দেয়। এবং একযোগে প্রায় কমপক্ষে প্রায় ৮০ টি! অনেকেই শুনে হয়ত বলবেন; ‘খাইছে আমারে’! সেটাই। আর এটাই এখন কামড়ের চেয়ে কম ভাবাচ্ছে না প্রতিটি অঞ্চলের মানুষকে। জরুরি এখন একটাই কাজ। কামড়ের সতর্কতার চেয়ে এখন প্রয়োজন রাসেলস ভাইপার সাপের নায়ক-নায়িকাদের রোমাঞ্চ বন্ধ করা? বংশ বিস্তার ঠেকানো। সাপদের আবাসভুমি গাছপালা ঝোঁপজঙ্গল পাহাড় বনভুমি ধ্বংস করা মানুষের পক্ষে এই কাজটি এখন একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এটা নিশ্চিত।
(চলবে)
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি

Facebook
Twitter
LinkedIn