ধারাবাহিক বিশেষ প্রতিবেদন : ০২
এমনও শুনেছি আমরা, এবার অগ্রহায়ণে কৃষক রমণীরা নতুন ধানের পিঠা তেমন খেতে পারে নাই। বন্ধ ছিল অনেকের নবান্ন-উৎসব। কারণ; নদীর চরে এই বিরল মরণঘাতী সাপের আতঙ্ক। কৃষি জমিতে রাসেলস ভাইপারের আগমনের আরও একটা প্রধান কারণ থাকতে পারে- প্রিয় খাবার ইদুর ও ব্যঙ। পুরো ধানের মৌসুম জুড়েই সাপের খাবার থাকে ভরপুর। এবার ফসলও হয়েছে সারা বাংলায় পুরোই বাম্পার। প্রতিটি জেলায় জেলায়। তারপরও কৃষকদের অভিযোগ ছিলো-রাসেলস ভাইপার নিয়ে। ‘জান বাঁচাতে কেউ তারা ক্ষেতের ধান কাটতে যাবে না। কেন যাবে না? ধান কাটতে গিয়ে রাসেলের ভয়ানক কামড়ে ওপারে যাওয়ার ইচ্ছে নেই কারও! কি যে ভয়ানক বিষয়। এবার এদিকে শিলা বৃষ্টির ভয়। ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার ভয়। ধান পেকে সোনালী হয়ে উঠেছে। তবু তারা ছিল অনঢ়। সোনালী ধান বাতাসে দোল খাক। আর রাসেল ভাইপার খাক ক্ষেতের ইদুর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃষকদের এই হাহাকার নিয়ে অনেকে জোকস্ পর্যন্ত করেছে। এমনও কমেন্টস করেছে – “কৃষকের ধান কাটার দায়িত্ব ছাত্রলীগকে দেয়া হোক …” সাপটি যে দেশে উদয় হয়েছে। অনেকে ধরছে। মারছে। তবুও অনেকের মনে একটু’ও বিশ্বাস হচ্ছে না, আদৌ রাসেলস ভাইপার রোজই নতুন নতুন এক একটি জেলায় দেখা দিচ্ছে। দেশের টেলিভিশন খবরেও তো আবার রোজ ভিডিও ও ছবিসহ রাসেলস ভাইপার ধরার, মারার এসব খবর প্রচার হচ্ছে। এসব ফেক কিংবা ভুয়া বলার তো কোন উপায় দেখছি না। এটাও নিশ্চিত বলা চলে, দেশের নেটিজনরা এটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিলে, পরে বিষয়টা শতভাগ সত্যি হলে কিন্তু দেশবাসীর জন্যই রাসেলস ভাইপার একটি আতঙ্কের নামান্তর হয়ে উঠবে।
এবারের কোরবানীর ঈদের দিনও খবর ভাইরাল হয়েছে, এই সাপের কাপড়ে একজন গৃহবধুর মৃত্যু। একটি বিড়ালেরও মৃত্যুর খবর এসেছে। কেউ কামড় খেয়ে সাপ সহ চলে এসেছে হাসপাতালে। আবার কেউ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের আশায় রাসেলস ভাইপার ধরে পাতিলে ভরে নিয়ে এসেছে প্রেস ক্লাবে! একজন তো কামড় খেয়েও সাপ ধরে বলছে- যে তিনি বেঁচে আছেন! কি যে একটা অবস্থা চলছে। রাসেলস ভাইপার আর গ্রামের সিধাসাধা মানুষগুলোর ভিতরে। এখন ওপরওয়ালাই জানেন। কার কপালে কি। কে কামড় খেয়ে বাঁচবেন। আর কে কামড় খেয়ে ওপরওয়ালার কাছেই যাবেন। মানুষ আর এই সাপ নিয়ে যেভাবে রোজকার বিনোদন শুরু হয়েছে, ফেসবুকে প্রবেশ করলেই টের পাওয়া যাচ্ছে। বাইরের এলাকার কথা একটু থাক। শুরু হয়েছে আরও একটা নতুন মাতামাতি।
ঢাকাবাসী কি শঙ্কা মুক্ত ?
(চলবে)
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি