কভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট চলাচলও ওই সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে। ফলে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের শিডিউল ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবে এ বিধিনিষেধের মধ্যেও প্রবাসী কর্মীদের জন্য পাঁচটি দেশে বিশেষ ফ্লাইট চালু থাকবে। গতকাল এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে বেবিচক।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিন সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। তবে এ সময়ে অনুমতি নিয়ে কার্গো উড়োজাহাজ, বিশেষ বা চার্টার্ড ফ্লাইট, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারবে। এছাড়া প্রবাসীদের আনা-নেয়ার জন্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার ও ওমানের বিশেষ ফ্লাইটগুলো আগের মতোই চলবে।
এ প্রসঙ্গে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, ২২ এপ্রিল থেকে পরবর্তী সাতদিন সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। তবে কার্গো বিমান, বিশেষ বা চার্টার্ড ফ্লাইট ও এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অনুমতি নিয়ে এ সময় চলাচল করতে পারবে। আগের মতোই প্রবাসীদের আনা-নেয়ার জন্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার ও ওমানের বিশেষ ফ্লাইটগুলো চলবে।
প্রসঙ্গত, কভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় ১৪ এপ্রিল সকালে শুরু হয় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা। পরবর্তী সময়ে প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরা নিশ্চিত করতে ১৭ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে পাঁচটি দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় বেবিচক। এ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর। শুধু প্রবাসী কর্মীরা এসব ফ্লাইটে যেতে পারবেন। আর দেশে এলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে প্রবাসী কর্মীদের।
এ পাঁচ দেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ১২টি এয়ারলাইনসকে অনুমতি দিয়েছে বেবিচক। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ছাড়া অন্যগুলো হলো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস, ওমান এয়ার, সালাম এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, ইতিহাদ, এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার অ্যারাবিয়া আবুধাবি, ফ্লাই দুবাই ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস।
এদিকে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে ১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া ‘কঠোর’ লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হবে। গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন পৃথকভাবে গণমাধ্যমে লকডাউন বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন।
১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া চলমান লকডাউন আগামীকাল শেষ হবে। গতকাল সকালে এ লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশের কথা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানায় কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
এদিকে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে গতকাল বেলা ১১টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার পর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি লকডাউনের মেয়াদ আরো সাতদিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। বৈজ্ঞানিকভাবে ১৪ বা ১৫ দিন লকডাউন না হলে সংক্রমণের চেইনটা পুরোপুরি ভাঙা সম্ভব হয় না। এটা বিবেচনায় নিয়ে ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আগের শর্ত মেনে লকডাউন চলবে। সভার একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি অনুমোদন দিলে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
অন্যদিকে গতকাল নিজ বাসভবন থেকে এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকার সারা দেশে আরো এক সপ্তাহ সর্বাত্মক লকডাউন বাড়ানোর সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে। তবে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ঈদের আগে লকডাউন শিথিলের কথাও ভাবা হচ্ছে। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের জন্য লকডাউন শিথিল হতে পারে।
প্রসঙ্গত, করোনার বিস্তার ঠেকাতে ৫ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এক সপ্তাহের জন্য জারি করা এসব নিষেধাজ্ঞা পরে আরো দুদিন বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল ভোর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আর ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় আরোপ করা বিধিনিষেধগুলো খুব একটা কার্যকর ছিল না।