পুঁজিবাজারে তৃতীয়বারের মতো কালো টাকা (অপ্রর্দশীত আয়) বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলো। তবে প্রথম দুইবার কী পরিমাণ কালোটাকা বিনিয়োগ হয়েছিল তার কোনো হিসাব নেই সরকারের কোনো সংস্থার কাছে। এমনকি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছেও নেই। সবাই বলছেন, অতীতে খুবই সামান্য পরিমাণ কালোটাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছিল। কারও কাছে পরিসংখ্যান না থাকলেও সব পক্ষই কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ চাচ্ছেন। জানা গেছে, এর আগে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর এবং ২০১১-১২ অর্থবছর দুই দফায় পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ওই দুই অর্থবছরে কী পরিমাণ কালোটাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছিল সেই হিসাব কারও কাছেই নেই। এই বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনে (বিএমবিএ) একাধিকবার যোগাযোগ করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ডিএসই বর্তমান পরিচালক এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান বলেন, সে সময় পুঁজিবাজারে কালোটাকা খুবই সামান্য বিনিয়োগ হয়েছিল। ফলে এই হিসাব আলাদা করে রাখা হয়নি। আর বিনিয়োগ না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অন্যান্য খাতে কালোটাকার বিনিয়োগে কোনো শর্ত দেওয়া হয় না। কিন্তু পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগ নানা শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আর বিনিয়োগে উৎসাহ পায় না। তিনি শর্তহীন কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবে। আর বিনিয়োগ বাড়লে বাজার চাঙা হবে। পুঁজিবাজার চাঙায় কালোটাকা সাদা করতে নিয়মিত ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে পুঁজিবাজারে এই অর্থ বিনিয়োগে এক বছর ‘লক ইন’ বা বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যদিও বাজেট প্রস্তাবে এই মেয়াদ ছিল তিন বছর। অর্থ বিলে তা এক বছর করে পাস করা হয়। কিন্তু বাজার-সংশ্লিষ্টরা তাও মানতে নারাজ। তারা চান শর্তহীন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেছেন, কী পরিমাণ কালোটাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে তা তিনি বলতে পারছেন না। তবে তা পরিমাণে খুবই কম হবে বলে তার ধারণা। শর্তের বেড়াজালে এই খাতে কালোটাকা বিনিয়োগ হচ্ছে না বলেও তিনি বলেন। এ বিষয়ে তারা অর্থমন্ত্রী বরাবর একটা প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও তিনি জানান। সাইদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার ছাড়াও ১০ শতাংশ কর দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা, নগদজমা, ব্যাংকে জমা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের মতো ক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে বাজেটে, সেসব ক্ষেত্রে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তাই কালোটাকা অন্য সব পর্যায়ে নিয়মিতকরণে যেহেতু কোনো শর্ত নেই, তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তটি প্রত্যাহার প্রয়োজন, অন্যথায় পুঁজিবাজারের চেয়ে ব্যাংকে আমানত রাখা বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার বিষয়ে মানুষ আগ্রহী বেশি হবে এবং পুঁজিবাজার উপকৃত হবে না। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্ততায় বলেছেন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম চালিকাশক্তি পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে তিন বছরের লক-ইনসহ কতিপয় শর্তে ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে এবং ওই বিনিয়োগের উপর ১০ শতাংশ কর দিলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের উপর প্রতি বর্গমিটারের উপর নির্দিষ্ট হারে এবং গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের উপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। এভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশে এই ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করছেন তিনি। এর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটেও ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সে সময় ওই অর্থ দুই বছর পুঁজিবাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া যাবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, এবার সেখানে এই সময়সীমা তিন বছর করার প্রস্তাব করা হলেও তা কমিয়ে এক বছর করা হয়েছে।