২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৫:৩১
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৫:৩১

দিদির জয় দেখালো, ভোটে জনগণই প্রধান খেলোয়াড়

পাশের বাড়িতে ভোট হয়ে গেল। টাইমস অব ইন্ডিয়ার ভাষায়, খেলা শেষ। এ খেলায় কে জিতেছেন তা এখন সবারই জানা। এক স্কুল শিক্ষিকা পরিণত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির প্রধান চরিত্রে। তার এই উত্থান রূপকথার কোনো গল্প নয়। প্রচণ্ড লড়াকু মনোবৃত্তি আর পরিশ্রম তৈরি করেছে একজন  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সমর্থকদের প্রিয় দিদির রাজনীতি অবশ্য বুঝা বেশ কঠিন। হুইল চেয়ারে বসেই তিনি হারিয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ আর নরেন্দ্র মোদির মতো ঝানু খেলোয়াড়দের।অথচ ভারতীয় রাজনীতিতে গত কয়েকবছর এই জুটিকে অজেয় মনে করা হচ্ছিল। মমতার এই লড়াইকে কিসের সঙ্গে তুলনা করা যায়। বক্সিংয়ের মোহাম্মদ আলী অথবা ক্রিকেটের স্টিভ ওয়াহ। শেষ পর্যন্ত যারা একবিন্দুও ছাড় দেন না।
পশ্চিমবঙ্গের এই ভোট নিয়ে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের আমজনতা। ফেসবুকে অসংখ্য মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন তারা। কেউ কেউ অবশ্য সতর্ক প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন। বলেছেন, তিস্তা চুক্তি আরো অনিশ্চিত হয়ে গেল। ভোটের রাজনীতিতে বামদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অনেকে। মমতার এই জয়ে বাংলাদেশিরা কেন খুশি হলো সে প্রশ্নে যাওয়ার আগে একবার দেখে নেয়া যাক, কেমন ছিল এবারের নির্বাচন? ভোটের পর যদিও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশ ছিল তুলনামূলক শান্ত। বিজেপি নির্বাচনী প্রচারণায় তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। ভোটের মাঠে বারবার ছুটে এসেছেন মোদি-অমিত শাহ জুটি। সবকিছু সরাসরি তদারকি করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা।  তারা আশাবাদী ছিলেন, পাশার দান এবার উল্টে দেয়া যাবে। বিপরীতে হুইল চেয়ারে বসে একাই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের দিন টুকটাক কিছু অভিযোগ এসেছে। কিন্তু মোটাদাগে মানুষ ভোট দিয়েছে নির্ভয়ে। মমতার মানুষের পাশে থাকার রাজনীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তারা। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবার ভোটই পড়েছে তৃণমূলের বাক্সে।  
জনগণ ও নির্বাচন কমিশনই যে গণতন্ত্রে ভোটের দিনের প্রধান চরিত্র পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন তা আবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। প্রধানমন্ত্রী কি চান, মুখ্যমন্ত্রী কি চান আদতে তার তেমন কোনো ভূমিকাই নেই। নির্বাচনী গণতন্ত্র থাকা দেশে সেটা বারবারই দেখা গেছে। না হয় এমন ভূমিধস বিজয়ের দিনে মুখ্যমন্ত্রী তার নিজের আসনে কীভাবে হেরে যান! এবং সে হার তিনি অনেকটা মেনেও নেন। অনেক দেশে এটা কল্পনাও করা যায় না।
বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন মমতার জয়ে উচ্ছ্বাস। সম্ভবত এর প্রধান কারণ হচ্ছে, তার অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। মুসলিম ভোটে বিভক্তির যে কৌশল নেয়া হয়েছিল শেষ পর্যন্ত তাও ব্যর্থ হয়েছে। মমতার জয় কেন ঢাকার জন্য স্বস্তির কারণ তা উল্লেখ করেছেন দিল্লির সিনিয়র সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী। তিনি বিবিসিকে বলেন, মমতা ব্যানার্জির বিজয় বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিরও কারণ। বিজেপি সরকার বলেছিল, পশ্চিমবঙ্গে জয়ী হলে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে তারা সিএএ বা সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ড অ্যাক্ট পাস করবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইনের বিরোধিতা করে আসছেন। ফলে একটা বিষয়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত থাকবে যে, সিএএ বা এনআরসি- আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এ নির্বাচন থেকে বাংলাদেশের কি কিছু শেখার আছে? খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজ লিখেছেন, ভারতে গণতন্ত্র এখন ক্ষয়িষ্ণু। তা সত্ত্বেও অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা টিকে আছে সেটা দেখা গেলো;  কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গে নয়, কেরালা এবং অন্যত্রও। গণতন্ত্র চর্চার জন্য কেবল নির্বাচন যথেষ্ট নয়, কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তাকে অগ্রসর হতে হয়। এর বিকল্প নেই। বাংলাদেশে যারা মনে করেন যে, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়াই ‘গণতন্ত্র’ সম্ভব তারা আশা করি এখান থেকে কিছুটা হলেও শিক্ষা  নেবেন, যদি নিতে চান।
শেষ কথা: নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়, কিন্তু নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র অবান্তর। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুলের নাম যদি গণতন্ত্র হয়, তবে গণতন্ত্রের শিকড় হচ্ছে নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন সেটাই দেখিয়ে দিলো। এ ভোট ভারতের রাজনীতিকেও শিকড়ে ফেরার ডাক দিয়ে গেলো।

Facebook
Twitter
LinkedIn