বিট কয়েনে (ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা) জড়িয়ে দেশের প্রায় ৫০০ বিত্তশালী হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত। একটি চক্র ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে এ খেলাকে প্রচলিত করার জন্য দেশে সক্রিয় । অনেকেই নিজস্ব অফিস ভাড়া করে, আবার কেউ বাসাবাড়িতে অনলাইনে বিট কয়েনের ব্যবসা করছেন। চক্রটি এ কাজে ব্যবহার করছে প্রায় কয়েকশ’ শিক্ষিত যুবককে। অনেকেই নেশায় পড়ে এবং পছন্দের কর্মসংস্থান না পেয়ে এ কাজে যুক্ত হচ্ছেন। অনেকেই আবার অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। বনে গেছেন অল্প সময়ে কোটিপতি। শূন্য থেকে হয়েছেন বাড়ি, গাড়ি ও অঢেল টাকার মালিক।
আবার কেউ কেউ পথে বসেছেন।
গত রোববার রাতে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বেসিক বিজ মার্কেটিং নামক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ইসমাইল হোসেন সুমন ওরফে কয়েন সুমনসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। দেশে যে কয়টি বিট কয়েনের চক্র রয়েছে তার মধ্যে সুমন হচ্ছে অন্যতম। অল্প পুঁজির কাপড়ের ব্যবসায়ী থেকে তিনি কোটিপতি বনে গেছেন।
এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন মানবজমিনকে জানান, ‘বিট কয়েন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। যারা বাংলাদেশে বিট কয়েন ব্যবসা করে তারা মূলত দেশের বাইরের গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। দেশের এ ব্যবসার তেমন কোনো প্রচলন নেই। র্যাব এ চক্রটিকে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বিট কয়েনের ব্যবসা নিষিদ্ধ। ভারত, মালয়েশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশে এর অনুমতি আছে। ওই দেশগুলোতে সরকারকে শুল্ক দিয়ে এ ব্যবসা করা যায়। কিন্তু দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার এ ব্যবসার অনুমতি দেয়নি।
২০২১ সালের ১৩ই জানুয়ারি গাজীপুরে কালিয়াকৈর থেকে বিট কয়েন ব্যবসায়ী রায়হান হোসেন ওরফে রায়হানকে গ্রপ্তার করে র্যাব। রায়হান অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করতো। এক পাকিস্তানি নাগরিকের সহায়তায় শুরু করে বিট কয়েনের নামে প্রতারণা। বিট কয়েনের ব্যবসা করে ওই সময় সে এক কোটি সাত লাখ টাকা দামের একটি গাড়ি কিনেছিল। মাত্র এক মাসে তার অ্যাকাউন্টে ৩৫ লাখ ইউএস ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়াও তার ২৫০টি বিট কয়েন অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছিল র্যাব। তাকে গ্রেপ্তারের পর থেকে চক্রে আর কারা জড়িত তাদের সন্ধানে মাঠে নামে র্যাব। তারই প্রেক্ষিতে গত রোববার বিট কয়েন ব্যবসার অন্যতম হোতা সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সূত্র জানায়, দেশে বিট কয়েনের প্রায় ৮ থেকে ১০টি চক্র রয়েছে। যারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এ ছাড়াও এ চক্রটি প্রতারণাসহ মানি লন্ডারিং, ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং, অনলাইনে বিভিন্ন প্রতারণার কাজে জড়িত। দেশে এবং বিদেশে বড়ধরনের বিট কয়েনের চক্র গড়ে উঠেছে। বিট কয়েনের ব্যবসায় যারা জড়িত আছে তারা অনলাইনে বার্তা পাঠায়। যার কাছে বার্তা পাঠায় তারা যদি এ ব্যবসায় রাজি হন তাহলে তিনি ফিরতি ম্যাসেজ পাঠালে তখন তাদের বিট কয়েন লেনদেন শুরু হয়।
সূত্র জানায়, ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি এলাকায় এ চক্রটি একাধিক অফিস ভাড়া করে ব্যবসা করে যাচ্ছে। কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে এ ব্যবসা করছে। যারা এ ব্যবসা করছেন তাদের কারও কারও ২৫০ থেকে ৩০০টি বিট কয়েন অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাদের রয়েছে ভার্চ্যুয়াল ওয়ালেট। যেখানে রয়েছে লাখ লাখ ডলার। সূত্র জানায়, ঢাকার অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী অনেক ব্যবসায়ী এ বিট কয়েনের ব্যবসায় পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। কেউ কেউ জড়িয়ে গেছেন এ বিট কয়েনের ব্যবসায়।