স্টাফ রিপোর্ট
এসআরপি ট্রেডিং নামে একটি হিমায়িত মাংস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে তাদেরই এক কর্মী। এ অভিযোগে মামলা দায়ের করার পর ওই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পল্টন থানা পুলিশ।
প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কাজী নাজমুল হাসান অভিযোজনিউজ২৪-কে জানান, অভিযুক্ত ফারুক হোসেন ২০১৮ সাল থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে চলতি বছরের শুরুতে তার অনিয়ম-দুর্নীতির কিছু তথ্য সামনে আসতে থাকে।
কোম্পানির মালিক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী শরিফুল আলম। হিমায়িত মাংস বিদেশ থেকে এনে কোল্ড স্টোরেজে রেখে বিক্রি করে আসছিল এই প্রতিষ্ঠান। চলতি মাসের শুরুতে মাংস ক্রেতারা জানান, এসআরপির স্টোরেজে মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। তখনই প্রতিষ্ঠানটির সবাই নড়েচড়ে বসে।
তেজগাঁও এলাকায় তৃতীয় পক্ষের একটি কোল্ড স্টোরেজে মাংস রাখত এসআরপি। সেখানে ১৬০ টন মাংস থাকার কথা ছিল। তবে অডিট শাখার লোকজন গিয়ে মাত্র ১৯ টন মাংস পান। যার মধ্যে ১০ টন মাংস অগ্রিম বিক্রি করে টাকা নিয়ে নেন ফারুক। স্টোরে থাকা অন্য কোম্পানির মাংসও নিজ কোম্পানির বলে বিক্রি করে দেন তিনি। এ ঘটনার সঙ্গে স্টোরের একজন সদস্যও জড়িত। নির্বিঘ্নে জালিয়াতি করতে তাকেও মাসে মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন ফারুক।
নাজমুল হাসান আরও জানান, ভয়াবহ এ জালিয়াতি ধরা পড়ার পর ফারুককে শোকজ করা হয়। এরপর তাকে কোম্পানি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে কোম্পানির সঙ্গে ফারুকের সমঝোতা হয় যে জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফেরত দেবেন তিনি। এরই মধ্যে ফারুক একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ওই ফ্ল্যাটসহ সব মিলিয়ে দেড় কোটি টাকার মতো পরিশোধ করেন ফারুক। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ফারুকের স্ত্রী কোম্পানির এক কর্মকর্তাকে ফোন করে জানান, তার স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। তখন কোম্পানির লোকজন কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যান। তাকে পাওয়া না গেলে কোম্পানির বাকি টাকা পাওয়া নিয়ে তাদের সংশয় বাড়ে। ফারুক গা-ঢাকা দিয়ে কোম্পানির লোকজনকে ফাঁসাতে পারেন বলে সংশয়ও ছিল। এরপর এসআরপির লোকজন বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করে। এ খবর জানার পর ফারুক প্রকাশ্যে এসে বাকি টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেন। ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত কয়েক দফায় কিছু টাকা পরিশোধ করলেও ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা বাকি রেখে মোবাইল বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যান ফারুক।
জানা গেছে, এসআরপির অর্থ কোম্পানির হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন তিনি। অন্তত ২০টি ব্যাংকে তার নামে-বেনামে হিসাব নম্বর রয়েছে। এর আগে ফারুক আর কে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার ছিলেন। ওই কোম্পানি থেকেও ১২ লাখ ১৫ হাজার ৩৪৮ টাকা চুরির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
পল্টন থানার ওসি সেন্টু মিয়া জানান, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ফারুককে ১৩ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে।