যোগাযোগ সচল রাখতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ পরিবেষ্টিত উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নে বিভিন্ন সড়কে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের একটি সরু নালার উপর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর চারটি ব্রিজ নির্মাণ করে। কোটি টাকায় ব্রিজগুলো নির্মিত হয় গত দেড় বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের মধ্যে। চার দিনের ব্যবধানে চরআলগী ইউনিয়নে নির্মিত চারটি ব্রিজের মধ্যে তিনটি ব্রিজ ভেঙে পড়েছে।
ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ায় উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের বোরাখালি, নয়াপাড়া, কুরতলীপাড়া, জিরাতিপাড়া, টেকিরচর, নিধিয়ার চর, হোসেনপুর উপজেলার বগা মারার চর, হাজিপুর, চর কাটাইল, নান্দাইল উপজেলার মহেশকুড়াসহ আশেপাশের ১০/১২টি গ্রামের ১০/১২ হাজার মানুষ মহাদুর্ভোগে পড়েছে। গফরগাঁও, হোসেনপুর ও নান্দাইল উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের হাজারো কৃষককে তাদের উৎপাদিত ফসল বিশেষ করে সবজি বাজারজাতকরণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
নির্মাণের অল্প সময়ের মধ্যে তিন তিনটি ব্রিজ ভেঙে পড়ায় তোলপাড় চলছে জেলার সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে। নির্মাণের স্বল্প সময়ের ব্রিজগুলো ভেঙে যাওয়া নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ব্রিজগুলোর নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরর পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রিজের নীচে পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে খনন করায় ব্রিজগুলো ভেঙে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা বলছেন, ব্রিজগুলোর নির্মাণে ত্রুটি ও গাফিলতির কারণে নির্মাণের স্বল্পসময়ের মধ্যে ব্রিজগুলো ভেঙে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের নালার উপর বোরাখালি গ্রামে নয়াপাড়া-হাজিপুর বাজার সড়কে ব্রিজটি (দেড় বছর আগে নির্মিত) গত ২৫ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, টেকিরচর গ্রামে কলেজ খেয়াঘাট- পূর্ব টেকিরচর রাস্তায় ব্রিজটি এবং কুড়তলীপাড়া গ্রামে কুড়তলীপাড়া-বোরাখালি সড়কে ব্রিজটি (সাত বছর আগে নির্মিত) একইদিনে গত ২৮ মে শুক্রবার সকালে ভেঙে পড়ে। এ নিয়ে এলাকার কৃষক, ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষের ক্ষোভের শেষ নেই।
জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড গত দুই বছর ধরে চরআলগী ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনামূলক অগ্রাধিকার ভিত্তিক ‘চরআলগী ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও চারপাশে বেড়িঁবাধ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গফরগাঁও সফরকালে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর থেকেই এ প্রকল্পে ডিপিপি তৈরির কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পের আওতায় দুই বছর ধরে চরআলগী ইউনিয়নের নালা ও খালগুলো সংস্কার, খনন ও পুনঃখনন করছে পানি উন্নয়ন। এদিকে এই নালাগুলোর উপর ২০১৪ সাল থেকে ব্রিজ নির্মাণ শুরু করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ব্রিজগুলোর নির্মাণ কাজের সময় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, শিডিউল মোতাবেক কাজ করা হয়নি এবং ব্রিজগুলো নির্মাণের সময় কোনো পাইলিং করা হয়নি। পূর্ব টেকির গ্রামের হালিম উদ্দিন (২৬), সুলতান মিয়া (৫০) জানায়, টেকিরচর গ্রামের ব্রিজটির নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ হলেও তিন বছরের মাথায় ২০২০ সালে নালাটি খননের আগেই ব্রিজটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে।
উপজেলার একাধিক ঠিকাদার নাম না প্রকাশ শর্তে অভিযোগ করে বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধিকাংশ ব্রিজগুলোতে পাইলিংয়ের কাজ ধরা থাকলেও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পাইলিং না করিয়ে, পাইলিং এর বরাদ্দের টাকা কমিশন হিসেবে হাতিয়ে নেয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ব্রিজগুলোর নির্মাণ কাজে কোনো পাইলিং ধরা ছিল না এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের খননের ফলে ব্রিজগুলো ভেঙে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা বলেন, এ বিষয়ে আমরা প্রাথমিক তদন্ত করেছি। এ ব্রিজগুলোর নির্মাণ কাজের কাঠামোগত বিষয়গুলো ঠিক নাই। পাইলিং নাই। পাইলিং ছাড়া এ রকম ব্রিজ ভেঙে পড়ারই কথা। এ ছাড়াও এ ব্রিজগুলো নির্মাণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর আমাদের সাথে কোন কথা বলেনি, আমাদের কোনো অনুমোদন নেয়নি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে, বিভাগীয় শাস্তির জন্য সুপারিশ করা হবে।