আবারো আলোচনায় বিয়ে। মন্ত্রীর বিয়ে। রেলপথমন্ত্রীর বিয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠিত হওয়ার পর এ মন্ত্রণালয়ের প্রথম মন্ত্রী হন কুমিল্লার মুজিবুল হক। তিনি ছিলেন চিরকুমার। কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার পর একপর্যায়ে কুমারত্বের অবসান ঘটান তিনি। আর এ মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনিও বিয়ে করলেন।
আর তার বিয়ের পরই আলোচনায় আসে রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বিয়ের বিষয়। আসলেই জীবন সে তো একা চলে না। জীবনের প্রয়োজনেই যুগলবন্দি হতে হয় মানুষকে। কিন্তু কিছু যুগল জন্ম দেয় আলোচনার। যেমনটি আলোচনার জন্ম দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। ৬৫ বছর বয়সে তিনি ফের বিয়ে করেছেন। কবুল করে এনেছেন নববধূ। এ কবুল নিয়ে আলোচনা দেশজুড়ে। কেউ কেউ রেলপথ মন্ত্রণালয় নিয়ে ট্রল করছেন। এর আগে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ৬৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন। মুজিবুল হক ছিলেন চিরকুমার। কবুল বলে তিনি কুমারত্ব ভাঙেন। আর সুজনের স্ত্রী বিয়োগের পর দ্বিতীয় বিয়ে এটি। তবে রেল মন্ত্রণালয় ছাড়াও মন্ত্রীদের বিয়ের প্রসঙ্গ আনলে প্রথমেই আসে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের নাম। তিনিও মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তখন তারও বয়স ছিল ৬৫ বছর। যদিও এ বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। আব্দুস সামাদ আজাদের বিয়ের ১৬ বছর পর রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ২০১৪ সালে আড়ম্বরে বিয়ে করেছিলেন। বিশাল আয়োজন ছিল এ বিয়েতে। এ দম্পতি এখন তাদের সন্তান নিয়ে সুখী জীবন কাটাচ্ছেন। এ দু’জনের বিয়ের খবর এখন আর কোনো বিষয় নয়। কিন্তু তাদের বিয়ের খবর ফের আলোচনায় আসে বৃহস্পতিবার যখন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের বিয়ের খবর চাউর হয়। নানাজনে নানা কথা বলতে থাকে। কেউ কেউ রেলপথ মন্ত্রণালয়কেও আলোচনার বিষয় করে তোলে। কি হয়েছে এ মন্ত্রণালয়ে। যেখানে মন্ত্রী হলেই বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন। কবুল করে নিয়ে আসছেন ঘরে নতুন বউ। দুর্মুখেরা যাই বলুক, আসলে বিয়ে করেছেন তারা তাদের প্রয়োজনেই। মন্ত্রী সুজন গত ৫ই জুন আক্দ করেছেন বলে মিডিয়াকে জানিয়েছেন। তার স্ত্রী ’ল পাস করেছেন। ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার। পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য সুজনের বয়স ৬৫ বছর। তিনিও আইনের ছাত্র ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুজনের প্রথম স্ত্রী নিলুফার ইসলাম ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে মারা যান। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। মন্ত্রী সুজনের স্ত্রীর নাম শাম্মী আকতার মনি। বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুরে। তার পিতা মরহুম আব্দুর রহিম। মনি থাকেন ঢাকার উত্তরায়। তার দুই ভাই বিরামপুরেই থাকেন। সেখানে ব্যবসা করেন তারা। এই আক্দ অনুষ্ঠান হয়েছে উত্তরাতেই। সেখানে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের নেতা নুরুল ইসলাম সুজন। পরে দশম এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলে নুরুল ইসলাম সুজনকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার প্রায় আড়াই বছর পর বিয়ে করলেন মন্ত্রী। সুজনের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তিন সন্তানেরই বিয়ে হয়েছে।
ওদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে রেলমন্ত্রী ছিলেন মুজিবুল হক। মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বিয়ে করেন। সেটি মুজিবুল হকের প্রথম বিয়ে। কনে হনুফা আক্তার রিক্তা। বিয়ের দেনমোহর ছিল ৫ লাখ ১ টাকা। আসরেই তা পরিশোধ করেন মন্ত্রী।
সে সময় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামে কনের বাড়িতে ছিল সাজ সাজ রব। বরকে স্বাগত জানাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে তৈরি করা হয় প্যান্ডেল। বর সেজে মন্ত্রী আসার পরপরই শুরু হয় হইহুল্লোড়, ধাক্কাধাক্কি। এর মধ্য দিয়েই মন্ত্রী গিয়ে পড়েন শ্যালিকাদের সামনে। গেটের অপর প্রান্তে পৌঁছতে শ্যালিকার দলকে দিতে হয়েছে ১ লাখ ১ টাকা।
বিয়েতে মুজিবুল হকের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ৭০০ জন। আর মেয়ের পক্ষের লোকজনসহ প্রায় ১৫০০ লোকের খাবারের আয়োজন করা হয়। বর্তমান রেলপথমন্ত্রী সুজন বর্তমানে করোনার যে মহামারি অবস্থা তাতে বিয়ের আয়োজন ধুমধামের সঙ্গে করতে পারবেন কিনা তা সন্দেহ পোষণ করেছেন।
দিনাজপুর থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, দিনাজপুরের জামাই রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বিরামপুর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার এডভোকেট শাম্মী আকতার মনিকে (৪২) বিয়ে করেছেন। শাম্মী দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন। গত শনিবার ইসলামী শরিয়াহ্ ও সরকারি আইন মেনে ঢাকায় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। শুক্রবার সকালে বিরামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র লিয়াকত আলী টুটুল বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শাম্মী আকতার মনির বড় ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম মিলনও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
জাহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, আমার বোন শাম্মী ঢাকার উত্তরায় থাকে। সে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করছে এবং কিছুদিন আগে আইনি বিষয়ে পরমার্শ নিতে রেলমন্ত্রীর কাছে যায়। সেখানে আমার বোনকে মন্ত্রীর পছন্দ হলে পারিবারিকভাবে ৫ই জুন তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে বরপক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিরামপুরের বিচারপতি ইজারুল হক ও তার স্ত্রী। কনে পক্ষে আমি ও আমার ভাই উপস্থিত ছিলাম। বিরামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র লিয়াকত আলী টুটুল জানান, আলোচনা ঢাকা থেকে শুরু হলেও তিনি ঘটকের দায়িত্ব পালন করেছেন। শাম্মীরও এটি দ্বিতীয় বিয়ে।