ব্রেক্সিট-পরবর্তী চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও কোমল পানীয় রপ্তানিতে ধস নেমেছে। ইইউ থেকে বের হওয়ায় বাণিজ্যর ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকায় প্রথম প্রান্তিকে দুই বিলিয়ন পাউন্ড রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে, যা প্রায় ৪৭ শতাংশ কম। গতকাল যুক্তরাজ্যের এইচএমআরসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খাদ্যপণ্য ও পানীয় রপ্তানি প্রায় দুই বিলিয়ন পাউন্ড হ্রাস পেয়েছে। একই সঙ্গে দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ৯০ শতাংশ। খবর: গার্ডিয়ান, বিবিসি।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ইইউ থেকে বেরিয়ে আসে ব্রিটেন। এরপর উভয়ের মধ্যে এক বাণিজ্যিক চুক্তি হয়। চুক্তিতে কিছু নতুন নিয়মনীতি চালু করা হয়। এতে উভয় পক্ষ থেকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া কভিডের বিধিনিষেধের কারণেও বাণিজ্যে ধীরগতি লক্ষ করা যায়।
যুক্তরাজ্যের ফুড অ্যান্ড ডেইরি ফেডারেশনের (এফডিএফ) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-বিষয়ক প্রধান ডমিনিক গোডিও বলেন, ইউরোপে দুই বিলিয়ন পাউন্ড রপ্তানি ক্ষতি আমাদের শিল্পের জন্য একটা বিপর্যয়। তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার যে, ইইউর সঙ্গে আমাদের নতুন বাণিজ্য্যিক ব্যারিয়ারের কারণে দীর্ঘমেয়াদি যুক্তরাজ্যের উৎপাদন খাতে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তিনি সরকারকে ইইউর সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যারিয়ার তুলে দিতে পরামর্শ দেন।
এইচএমআরসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপে দুগ্ধজাত পণ্য তথা পনির রপ্তানি ৯০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দুই-তৃতীয়াংশ। অন্যদিকে হুইস্কি রপ্তানি ৩২ শতাংশ, চকলেট ৩৭ শতাংশ ও মাটন রপ্তানি কমেছে ১৪ শতাংশ।
এফডিএফ বলছে, এ হিসাবে করোনা-পূর্ব ২০১৯ সালের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে রপ্তানি বাণিজ্য ঘাটতির আকার আরও বড় হয়, যেখানে পনির রপ্তানি ৭২ শতাংশ কম, মাছ রপ্তানি ৫২ শতাংশ ও চকলেট রপ্তানি ৩৭ শতাংশ কম হয়েছে।
সর্বোপরি বছর ভিত্তিতে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে খাদ্য ও পানীয় রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ৭০ দশমিক আট শতাংশ, স্পেনের সঙ্গে ৬৩ শতাংশ, ইতালির সঙ্গে ৬১ শতাংশ ও জার্মানির সঙ্গে ৫৫ শতাংশ।
অন্যদিকে ইইউ থেকে আমদানিও কমেছে যুক্তরাজ্যের। ইইউ থেকে মদ আমদানি ২০ শতাংশ, ফল ১৫ দশমিক সাত শতাংশ এবং শাকসবজি ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। আর আয়রারল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যের পনির, মুরগি ও মাংস আমদানি কমেছে। এবারই প্রথমবারের মতো জার্মানিকে হটিয়ে চীন যুক্তরাজ্যের বাজারে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়।
এদিকে ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম কমে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যে খুচরা বিক্রি কমেছে। গতকাল ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম ডলারের বিপরীতে গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সর্বনি¤েœ দাঁড়িয়েছে।
গত ৬ মে প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ পাউন্ড এক দশমিক ৩৮৬ শতাংশ কমেছে, যা গতকাল আরও বেশি কমে যায়। আর গতকাল ইউরোর বিপরীতে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ কমেছে, যা গত ১০ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ কম।