২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১:০১
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১:০১

হাত বাড়ালেই মেঘের ছোঁয়া

পার্বত্য জেলার মধ্যে ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে প্রিয় বান্দরবান। অপরূপ রূপ আর পাহাড়ে ঘেরা এ জেলা। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদ দেবে এখানের উঁচু পাহাড়। এর চূড়ার উঠে হাত বড়ালেই যেন মেঘের পরশ পাওয়া যায়। হিমেল হাওয়ায় যেন মন উড়ে যায় সুউচ্চতায়। তখন মনে হয়, যদি পাখি হয়ে জন্মাতাম কতই না ভালো হতো!

অভিযোগ নিউজ বিডি ২৪ | OVIJOG NEWS BD 24

কিছুটা বিলম্বে সেমিস্টার শুরু হয়। তাই ভ্যাকেশন না দিয়েই নতুন সেমিস্টার আরম্ভ হয় আমাদের। সদ্য ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি। এ কারণে অল্প সময়ে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে বেরিয়ে পড়ি অজানার উদ্দেশ্যে।

ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে গিয়ে ঠিক করি বান্দরবানে যাব। ব্যস! যে চিন্তা, সেই কাজ। হঠাৎ পরিকল্পনাকে পাথেয় করে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ি। আমরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী।

ছয়জনের একটি দল একদিনের ব্যবধানে ১৪ জন হয়ে গেলাম রোমাঞ্চকর যাত্রার অভিপ্রায়ে। ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনে আমাদের যাত্রা শুরু। বেশ কয়েকটি আসন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও সবাই জমায়েত হই এক জায়গায়, স্থানান্তর করি কয়েকটি আসন। রাতভর চলল আড্ডা আর গানের আসর, কারও চোখেই যেন ঘুম নেই। সুর থাকুক বা না থাকুক, গাদাগাদি করে একসঙ্গে বসে সবাই মিলে গান গাওয়ার মজাই আলাদা। তবে আমাদের এ আড্ডা আর গানের আসরকে মাছের বাজার ও কারও হাইপ্রেশারের কারণ বলেও আখ্যা দিয়েছেন অনেক যাত্রী। এতে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেও ঘুমাইনি কেউ।

অভিযোগ নিউজ বিডি ২৪ | OVIJOG NEWS BD 24

পরদিন সকালে পৌঁছলাম চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে। এখানে পাবলিক টয়লেটের লম্বা লাইনের কারণে কালক্ষেপণ হয় আমাদের, এর দামও দিতে হয়Ñহাতছাড়া হয়ে যায় বান্দরবানের প্রথম বাসটি। অগত্যা ঘণ্টা দুয়েক পর পরবর্তী বাসে যেতে হলো। ভদ্র থাকার শপথ নিয়ে বাসে চড়লেও খানিক পরেই শুরু হলো গানের আসর। কিন্তু এবারেও থেমে গেল শুরু হতে না হতেই। ভদ্রতার শপথের কথা মনে পড়তেই যে যার আসনে বসে গেলাম আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে গেলাম বান্দরবান শহরে।

বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়িতে করে গেলাম বগালেক। মাঝপথে রুমা বাজারে আর্মি চেকপোস্ট পার করলাম। চান্দের গাড়িতে যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই দেখা মিলল আকাশচুম্বী উঁচু পাহাড়ের। একের পর এক চড়াই-উতরাই পার করছিল আমাদের পরিবহন। খাড়া ঢাল উঠানামা করতে করতে আতঙ্কে চিৎকার আর স্বস্তির হাসি দুটোই ভাসছিল সবার মুখে। তবে কিছুদূর যেতেই চারদিকে সারি সারি পাহাড়ের সমাবেশ দেখে আতঙ্ক ভুলে মুগ্ধতায় ছেয়ে গেল পরিবহনটির ভেতরের পরিবেশ। পাহাড়ের চূড়ায় কোমল মেঘের অভিযাত্রা আর সেটা ভেদ করে সূর্য রশ্মির আগমনে মনে হচ্ছিল, যেন এক টুকরো স্বর্গ। এমনই স্বর্গসুখের পরিক্রমা পেরিয়ে পৌঁছলাম বগালেকে।

অভিযোগ নিউজ বিডি ২৪ | OVIJOG NEWS BD 24

সময়টা শীতের হওয়ায় লেকের পানি ঘোলা ছিল, তবে সৌন্দর্যের এতটুকু কমতি ছিল না। মনে হচ্ছিল, পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে তৈরি করা একটি পানির পাত্র যেখানে পানি কখনোই শুকায় না। এরপর শুরু হলো আসল চ্যালেঞ্জÑট্রাকিং করে চূড়ায় উঠা। সকাল থেকেই ছোট একটা বাঁশ হাতে পাহাড়ি রাস্তায় পথচলা শুরু হয় আমাদের। টানা চার ঘণ্টা উঁচু রাস্তায় হেঁটে ক্লান্ত হচ্ছিলাম বটে কিন্তু কেওক্রাডংয়ের চূড়া দেখতে পেয়ে সব ক্লান্তি চলে গেল। মনে হচ্ছিল মেঘ যেন কানের পাশ দিয়ে তাদের দেশে আহ্বান জানিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে।

গোধূলির শেষ আলো দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ২৫০ ফুট উপরে বসে। ভাগ্যের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হয়, কারণ সে রাতটি ছিল ভরা জোসনার। সঙ্গে ছিল ঝড়ো বাতাস আর ঠাণ্ডার মিশেল। সব মিলিয়ে চরম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। চাঁদটাকে আরও কাছ থেকে পরিষ্কার দেখার স্বাদ পাই, যা রয়ে যাবে মনের গহীনে। কটেজের বেলকনিতে বসে চাঁদের আলো গায়ে মাখিয়ে গল্প চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। অনেকেই তখন স্বস্তির স্বরে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলছিল আহা আর কি প্রয়োজন!

কেওক্রাডং ঘুরতে আসা বাকৃবির শিক্ষার্থী সরকার ফাইদা বলেন, পাহাড় বরাবরই আমাকে আকর্ষণ করে। সম্ভব হলে ছুটে আসি পাহাড়ের টানে তাকে সঙ্গ দিতে। আমার জীবনের বেশ কয়েকটা ট্যুরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে রোমাঞ্চকর। ট্র্যাকিং করে উপরে উঠা বেশ কষ্টকর হলেও কেওক্রাডংয়ের চূড়ার দৃশ্য সে কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে। এত সুন্দর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল, প্রাণটা ভরে গেল। পাহাড়ে বাস করা মানুষেরা হয়ত এ কারণেই এখানে টিকে থাকার শক্তি পায়।

Facebook
Twitter
LinkedIn