রাত পোহালেই সুপার এল ক্লাসিকো। রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল। যে ফাইনাল দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে গোটা বিশ্ব। বলা ভালো দুই ভাগে বিভক্ত গোটা বিশ্ব। কারণ ধ্রুপদির লড়াইয়ে যে মুখোমুখি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা।
আবার সেটা কোপার ফাইনালে। মাঠে নামার আগে কথার লড়াই হচ্ছে বেশ। সমর্থকরা ফুটছেন তুখোড় উত্তেজনায়। আর সেটা বুয়েন্সআয়ার্স, মারাকানা থেকে সাত সমুদ্দর তেরো নদীর এপারে বঙ্গদেশেও।
উপমহাদশের শ্রেষ্ঠত্বের আসর কোপার ফাইনালে রোববার ভোর ৬টায় মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। তার আগে দেখে নেয়া যাক কোপা আমেরিকা ফুটবলে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ফাইনালগুলো। কারা আছে এসব পরিসংখ্যানে এগিয়ে।
বিশ্বকাপ ফুটবলেরও আগে শুরু কোপা আমেরিকা ফুটবল। ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপ শুরু। কিন্তু কোপা শুরু হয়েছে এরও ১৪ বছর আগে, ১৯১৬ সাল থেকে। এখন পযন্ত এই কোপায় ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ১০বার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে রেকর্ড ৮বারই চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, দুইবার ব্রাজিল।
কোপায় আগের ৪৬ আসরের মধ্যে ৪২ বার অংশ নিয়ে আর্জেন্টিনা ২৮ বার ফাইনাল খেলেছে। ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিল ৩৭ বার অংশ নিয়ে ২০ বার ফাইনাল খেলেছে। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাত্র ৯ বার! এবার আর্জেন্টিনার ২৯তম এবং ব্রাজিলের ২১তম ফাইনাল। দেখা যাক, কে চ্যাম্পিয়ন হয়?
আগের ১০বারের ফাইনাল মোকাবিলায় ব্রাজিল আধিপত্য দেখায় শেষ দুইবারের ফাইনালে। ২০০২ সালের ফাইনালে ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হওয়ায় ট্রাইবেকারে জিতেছিল রোনালদো, রিভালদোরা। ২০০৭ দুই দলের শেষ কোপা ফাইনাল। এবারো ব্রাজিল জেতে হেসে খেলে ৩-০ গোলে। এরপর দীর্ঘ ১৪ বছরের অপেক্ষার পর আবার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মুখোমুখি ফাইনালে।
শেষ দুটি ফাইনালে ব্রাজিল জয়ী। তার মানে, তার আগের আট ফাইনাল মোকাবিলায় জিতেছে আর্জেন্টিনা। ১৯১৬ কোপার প্রথম আসরে ফাইনাল খেলেছিল উরগুয়ে ও আর্জেন্টিনা। জিতেছিল উরুগুয়ে। ঠিক যেন ১৯৩০ প্রথম বিশ্বকাপের প্রতিচ্ছবি।
১৯১৭ দ্বিতীয় আসরেও একই চিত্র, উরুগুয়ে চ্যাম্পিয়ন, আর্জেন্টিনা রানার্স আপ। তৃতীয় আসরে ১৯১৯ সালে চমক দেখায় ব্রাজিল। উরুগুয়েকে হারিয়ে জেতে প্রথম শিরোপা। দুই বছর পর ফাইনালে আবার উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনা। জয়ী উরুগুয়ে। ১৯২১ সালে কোপায় প্রথম ট্রফি জেতে আর্জেন্টিনা, আর সেটা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে।
১৯২৫ সালে দ্বিতীয় ফাইনাল দেখায় জয়ী আর্জেন্টিনা। এরপর পযায়ক্রমে ১৯৩৭, ১৯৪৫, ১৯৪৬, ১৯৫৭, ১৯৫৯, ১৯৯১ সালের কোপার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে আর্জেন্টিনা।
ফিফার তথ্য অনুযায়ী মোট ১০৫ বার সাক্ষাৎ হয়েছে এই দুই দলের। আর্জেন্টিনা জিতেছে ৩৮ বার ও ব্রাজিল জিতেছে ৪১ বার। ড্র হয়েছে ২৬ বার। মুখোমুখি সাক্ষাতে ১৬০টি গোল করেছে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিল করেছে ১৬৩টি গোল।
গত আসরে ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে পেরুকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল। এবার সেই পেরুকে নেইমাররা হারিয়েছে সেমিতে। ঘরের মাঠ বলেই উজ্জীবিত নেইমাররা। তিতের অধীনে দীর্ঘ দিন অপরাজিত দলটি। মারাকানায় হারের রেকর্ডও অনেক দূরের গল্প। সব মিলিয়ে ব্রাজিল এগিয়ে থাকছে অনুমিতভাবে। আর অতীত পরিসংখ্যান আর্জেন্টিনার সঙ্গী।
এই কোপার ফাইনাল আর্জেন্টিনার জন্য শুধু একটা ফাইনালই নয়, ২৮ বছর পর শিরোপার বন্ধ্যাত্ব ঘুচানোর পরম উপলক্ষ। তার চেয়ে বড় কথা, মেসির দরকার একটি ট্রফি। ২০১৪ সালের পর তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেও শিরোপায় চুমু আকতে পারেননি ফুটবলের বরপুত্র মেসি। এবার আরেক ফাইনাল তার সামনে। হবে স্বপ্ন পূরণ? নাকি আকাশী-সাদা জার্সিকে ম্লান করে উৎসবের রং হবে হলুদ? তা জানা যাবে কাল সকালেই।