২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১০:৩৮
২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১০:৩৮

আহতদের চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হচ্ছে লেবাননে

চারদিকে লাশ আর লাশ। রক্তাক্ত মানুষ দিশেহারা। হাসপাতালে হৃদয় বিদারক দৃশ্য। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বিলাসবহুল হোটেল, আবাসিক ভবন। আহতদের চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হচ্ছে। এমন এক ধ্বংসলীলাকে সামনে রেখে কাঁদছে লেবানন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত ও ৪ হাজার মানুষ আহত হওয়ার পর সেখানে আজ বুধবার থেকে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মন্ত্রীপরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন প্রেসিডেন্ট মিশেল আওন।সেখান থেকে দু’সপ্তাহের জরুরি অবস্থা ঘোষণা দেয়া হতে পারে। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যে গুদাম থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখানে ৬ বছর ধরে অনিরাপদ অবস্থায় মজুদ রাখা হয়েছিল ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। এ ছাড়া জরুরি তহবিল থেকে ১০ হাজার কোটি লিরা বা প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার অবমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। লেবাননে রেডক্রসের প্রধান জর্জ কেত্তানি স্থানীয় মিডিয়াকে বলেছেন, আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি, এটি একটি ‘হিউজ ক্যাটাস্ট্রোফ’ বা ভয়াবহ বিপর্যয়। সব স্থানেই মানুষ মারা গেছেন। সর্বত্রই হতাহত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে অব্যাহতভাবে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে।
মঙ্গলবার কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। এর জন্য দায়ীদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে লেবাননের সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিল। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অনুমান, তা ২০১৩ সাল পর্যন্ত বন্দরে একটি জাহাজে আনলোডের অপেক্ষায় ছিল। সেখান থেকে তা সরিয়ে নিয়ে একটি গুদামে রাখা হয়। সেখানেই ওই বিস্ফোরণ ঘটে মঙ্গলবার। এতে এক অবর্ণনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয় রাজধানী বৈরুতে। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে ২৪০ কিলোমিটার দূরে প্রতিবেশী দেশ সাইপ্রাস থেকে তা অনুভূত হয়েছে। রাতের আকাশে আগুন, ধোয়া আর ধ্বংসাবশেষ উঠে যেতে থাকে উপর থেকে আরো উপরে। চারদিকে তখন মৃত্যু আতঙ্ক। মানুষ ছুটছে দিশেহারা। রক্তাক্ত মানুষ। আহত মানুষ। আহত সন্তান কোলে নিয়ে দিকভ্রান্তের মতো ছুটছেন কোনো এক পিতা। হলিউডের একশন সিনেমার মতো একের পর এক ভবন বিস্ফোরণে গগণ বিদারী আওয়াজ করছে। রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে আছে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনো গাড়ি। কংকালের মতো দাঁড়িয়ে আছে কোনো সুদৃশ্য অট্রালিকা। এ দৃশ্য বর্ণনা করার মতো নয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, আমার চারপাশে সব ভবন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। আমি হেঁটে যাচ্ছি মৃত্যু উপত্যকার ভিতর দিয়ে। পায়ের নিচে শুধু কাচের গুঁড়ো। যতদূর চোখ যায় শুধু ধ্বংসস্তূপ। হাসপাতাল উপচে পড়ছে আহতদের ভিড়ে। স্থান সংকুলান হচ্ছে না সেখানে। স্যালাইন পুশ করা রোগীকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে স্বজনদের।

Facebook
Twitter
LinkedIn