ভূমি জরিপের পর চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক লিখন এবং যথার্থ ভুল মাঠ পর্যায়েই সংশোধন তথা রেকর্ড সংশোধন করার জন্য সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) (এসিল্যান্ড) নির্দেশ দিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা সহ আজ বৃহস্পতিবার একটি পরিপত্র জারি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উক্ত পরিপত্রের নির্দেশনা মোতাবেক মাঠ পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হলে খতিয়ানের ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য ভূমির মালিককে দেওয়ানী আদালত ও ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার প্রয়োজন হবেনা। এতে ভূমি সংক্রান্ত জনদুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়া পরিপত্রটি পড়ে জমির মালিকগণও সহজে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পেতে পারেন।
এর আগে ২০১৫ সালে খতিয়ানের ভুল সংশোধন বিষয়ক একটি পরিপত্র জারি করা হলেও ভূমি সংক্রান্ত বিষয়াদি থেকে নানামুখী পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণে ক্ষেত্রবিশেষে মাঠ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া সহজ ছিলনা। এমতাবস্থায়, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমনভাবে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেন যেন তাতে সকল বিষয়াদি স্পষ্টীকরণ করা থাকে। অর্থাৎ, পরিপত্রটিই যেন একটি রেফারেন্স হিসেবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ ব্যবহার করতে পারেন। ফলশ্রুতিতে ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, পিএএ স্বাক্ষরিত ভূমি সেক্টরের জন্য এক যুগান্তকারী, সময়োপযোগী ও ব্যতিক্রমী এ পরিপত্র বৃহস্পতিবার জারি করা হয়েছে।
উপর্যুক্ত প্রসঙ্গে পরিপত্রে বলা হয়, ‘জরিপ পরবর্তীকালে সেবাগ্রহীতাদের খতিয়ানের এ ধরনের ভুল যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে সংশোধনের সেবা দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। আইন ও বিধিতে ক্ষমতা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং এ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রমূলে নির্দেশিত হওয়া সত্ত্বেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এতৎসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় সর্বশেষ জরিপে প্রস্তুত ও চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত স্বত্বলিপি বা খতিয়ানে পরিদৃষ্ট ভুল সংশোধনের বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি)গণ কর্তৃক জনগণকে প্রার্থিত প্রতিকার প্রদান করা হচ্ছে না মর্মে পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা কাম্য নয়’।
পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে ‘খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক অন্তর্ভুক্তি এবং যথার্থ ভুল সংশোধন বিষয়ে আইন ও বিধিমালায় উল্লিখিত বিধান এবং জারিকৃত পরিপত্রের নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণের স্বার্থে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের এ বিষয়ে সচেষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ধারণার সুস্পষ্টতা ও সমরূপতা একান্ত প্রয়োজন’।
উল্লেখ্য, পরিপত্রে বিভিন্ন আইনের সূত্র উল্লেখপূর্বক বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ভূমি জরিপের পর চূড়ান্তভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত খতিয়ানের করণিক ভুল, প্রতারণামূলক লিখন এবং যথার্থ ভুলের বিভিন্ন সম্ভাব্য ধরণ বর্ণনা করা হয়েছে পরিপত্রে। এসব ভুল সংশোধনের পদ্ধতিও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সহজেই সাত পৃষ্ঠার পরিপত্রটি থেকে রেফারেন্স গ্রহণ করতে পারেন।
এছাড়া, পরিপত্রে রেকর্ড সংশোধের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে উল্লেখ করা হয় যে, ‘সংশ্লিষ্ট আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীকে আবেদনের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হবে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করার সিস্টেম চালু হলে তা নির্ধারিত সরকারি হিসাবে সরাসরি প্রদেয় হবে। এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট মিসকেসে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ হওয়ার পর আবেদনকারীর নিকট থেকে নামজারি মামলার জন্য নির্ধারিত হারে নোটিশ জারি ফি, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি এবং খতিয়ান সরবরাহ ফি একত্রে ডিসিআর-এর মাধ্যমে আদায় করে যথারীতি সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। তবে জেলা প্রশাসক বা তার প্রতিনিধি কর্তৃক সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য আবেদনে কোর্ট ফি কিংবা অন্যান্য ফি আদায় প্রযোজ্য হবে না।