বাম্পার ফলন ও পর্যাপ্ত আমদানির পরেও বাড়ছে দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম। করোনার মধ্যে পণ্যটির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আবার আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে চালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি পণ্যটি আমদানিতে সব ধরনের নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে চাল আমদানিতে আগাম কর ৫ শতাংশ ও আগাম আয়কর ৫ শতাংশ বহাল রয়েছে। সবমিলিয়ে এখন থেকে চাল আমদানিতে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। যা আগে ছিলো ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কাস্টমস পলিসি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া সমকালকে বলেন, বাজারে চালের দাম সহনীয় রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে ৭ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে একইভাবে চালের আমদানি শুল্ক কমায় সরকার। ওই সময় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কম শুল্কে আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। মে থেকে আবার আগের মতো ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয় চাল আমদানিতে। এ সময়ে বেসরকারি আমদানিকারকরা আর চাল আমদানি করেনি।
কিন্তু সরকার কম শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ দিলেও বাজারে চালের দাম কমেনি। নতুন ধান ওঠার পরও বাজারে চালের দাম চড়া। বাজার পরিস্থিতি সামলাতে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং সরকারের মজুদ বাড়ানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ পরিমান কমানো হলো। ফলে আমদানি শুল্ক দাঁড়ালো ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি প্রধান এই খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর থাকা সব ধরনের নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্ক শর্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার করা হলো। চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্ক রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আগাম কর ৫ শতাংশ ও আগাম আয়কর ৫ শতাংশ বহাল রয়েছে। ফলে এখন থেকে চাল আমদানিতে সব মিলিয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে, যা এতদিন ছিল ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা।
কয়েক মাস ধরে দেশের বাজারে চালের দাম বেশ বেড়েছে। সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থার টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৭ থেকে ৫২ টাকায়। সরু ও মাঝারি মানের চালের দামও বেশ বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এছাড়া মাঝারি মানের চালের দাম ১৪ শতাংশ এবং সরু চালের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মজুদ এবং বাজারে সরবরাহ বাড়াতে আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকার নিজেই চাল আমদানি করছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও আবেদন সাপেক্ষে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৬০ টন চাল আমদানি হয়েছে। যার পুরোটাই আমদানি করেছে সরকার। ওইদিন পর্যন্ত সরকারি কোষাগারে ১২ লাখ ৩ হাজার টন চাল মজুদ রয়েছে।