উত্তরের নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির কারণে চরাঞ্চল ও নিম্মাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। সাথে আছে ভাঙ্গন। বেড়েছে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ, শুকনা খাবারের সঙ্কট ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে রোববার তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে ৫, ধরলার পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ২৫ এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার ব্রহ্মপুত্রের পানি ২০, ধরলার পানি ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি বৃদ্ধির কারণে এই তিনটি নদী অববাহিকার নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিদমারি, সদর, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর, সাঘাটা, কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ি, রৌমারীর চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
পানি উঠেছে রংপুরের গংগাচড়ার নোহালী, কোলকোন্দ, গজঘন্টা, মর্নেয়া, কাউনিয়ার বালাপাড়া, টেপামধুপুর, পীরগাছার ছাওলা, তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। শত শত পুকুরের মাছ গেছে ভেসে। পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিও নিমজ্জিত হচ্ছে পানিতে। ফলে লাইন অফ করে রেখেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পানিবন্দী মানুষের যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চরম সঙ্কট বিরাজ করছে। সঙ্কট শুকনা খাবারের। লেট্রিন ব্যবস্থাও ধসে পড়েছে। শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। দুর্গত এলাকায় যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ভূক্তভোগী মানুষেরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষিটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানিয়েছেন, রাতে মাইকিং করে পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং স্কুলে আশ্রয় নিতে বলেছি আমি। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পেও পানি উঠায় মানুষ সমস্যায় পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানান, পানি বাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় যে ভাঙ্গন ধরেছে। সেখানে জরুরি কোনো সরকারি স্থাপনা থাকলে সেসব জায়গায় জিওব্যাগ ফেলে কাজ করছি। বৃষ্টি কিংবা উজানের ঢল না নামলে পানি দ্রুত কমে যাবে।
রংপুরের ডিসি আসিব আহসান জানিয়েছেন, তিস্তার পানি মাস খানেক ধরে বাড়ছে-কমছে। নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় বসবাসকারীরা সে কারণে কষ্ট পাচ্ছেন। আমি নিজেই গঙ্গাচড়ার বিনবিনিয়া এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানে ত্রাণও দেয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় অস্থায়ীভাবে কিছু ল্যাট্রিন দেয়া হয়েছে। পানিবাহিত রোগ যাতে না ছাড়ায় সে ব্যাপারে সজাগ আছি।
এদিকে বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব ভুঞা জানান, এখন পর্যন্ত এই বিভাগে বড় বন্যা হয়নি। আমরা যেকোনো ধরনের বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত আছি। সে হিসেবে পাউবো, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া আছে।