২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৪:৩৩
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৪:৩৩

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চোরাই মালের জমজমাট ব্যবসা

দেশী-বিদেশী অর্থায়নে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিত্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক পণ্য বিনামূল্যে প্রদান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি প্রসাধনী ও তৈজসপত্র ও বিনোদন সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে দেদারসে। এসব সামগ্রী ব্যবহারে তারা তেমন অভ্যস্তও নয়। তাই ক্যাম্প কেন্দ্রিক রোহিঙ্গা ও স্হানীয় মুনাফালোভীরা মিলে গড়ে তুলেছে এসবের ক্রয় বিক্রয় সিন্ডিকেট।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর কোন পরিবারের ৮/১০ জন সদস্য ছিল। সেভাবেই তারা নিবন্ধিত হয়। পরবর্তীতে ব্লক ও ক্যাম্প স্থানান্তরিত হয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা একাধিক রেশন কার্ডে নিবন্ধন করে। আবার অনেকে ভারত,পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে বৈধ ও অবৈধভাবে চলে যায়।

কিন্তু তাদের নামে নিয়মিত রেশন ও অনান্য ত্রাণ সামগ্রী উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে চাল,ডাল,তেল,ডিম,মাছ,মুরগী,শুকনো মাছ প্রভৃতি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় বিক্রয়ে গড়ে উঠেছে একাধিক সিন্ডিকেট। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অর্থায়নে প্রায় ৮ লক্ষ ৬০ হাজার রোহিঙ্গার নিয়মিত উপরোক্ত মালামাল বিতরণ করা হয়।

আর এসব পণ্য বিতরণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একাধিক ভেণ্ডর। কার্যতঃ এসব ভেণ্ডরদের যোগসাজশে ত্রাণের মালামাল ক্রয় বিক্রয়ের সিন্ডিকেটগুলোর জম্ম বলে সূত্র জানায়। সূত্র মতে, উচ্চ মূল্যে এসব প্রয়োজনীয় সামগ্রী ভেণ্ডররা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হয়ে রোহিঙ্গাদের বিতরণ করে থাকে। উদ্বৃত্ত বা অতিরিক্ত পণ্য সামগ্রী কম মূল্যে তারাই আবার রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ক্রয় করে গুদামজাত করে ফের রোহিঙ্গাদের বিতরণ করে। এতে প্রতিটি ক্যাম্প ভিত্তিক রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত একটি উচ্ছৃংখল সংগঠন সিন্ডিকেটগুলো নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ উঠেছে।

প্রায় প্রতিদিন এধরণের কত রকমের নিত্য প্রয়োজনীয় ও প্রসাধনী পণ্য সামগ্রী জব্দ করছে পুলিশ। জব্দকৃত পণ্যের মধ্যে আছে চাল,ডাল,তেল, চিনি, শুকনো পুষ্টি, তেরপাল, সাবান, ইয়াবা, গাঁজাসহ কত কি।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশেষ অভিযানে ৫ নং ক্যাম্পে বিনামূল্যে বিতরণকৃত বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী ও এগুলো পরিবহনে নিয়োজিত ২ টি সিএনজি আটক করেছে পুলিশ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৪ এপিবিএন পুলিশের কমান্ডার পুলিশ সুপার মোঃ নাইমুল হক অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের ইরানী পাহাড় এপিবিএন ক্যাম্পের সদস্যরা বিনামূল্যে প্রদত্ত মানবিক সহায়তা সামগ্রী চোরাই পথে ক্রয় বিক্রয় করার সময় ৫ নং ক্যাম্প হতে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী আটক করা হয়েছে। একই সাথে এসব ত্রাণ সামগ্রী পরিবহন কাজে নিয়োজিত ২ টি সিএনজি অটোরিকশাও জব্দ করা হয়।

এপিবিএন এর প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী জব্দকৃত মালামালের মধ্যে বালতি ২২টি, বেডশীট ১০০টি,ত্রিপল ০৩ টি,লাইফবয় সাবান- ১৮৬৮ টি, হুইল সাবান ৩৮১ টি,একটিভ সাবান ৬৯৮ টি, সূর্য সাবান ৬৯৪ টি, স্যাভলন বোতল ৪১৮ টি, কাপড়ের নেপকিন- ৮৬ টি। ইতিপূর্বে এপিবিএন পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দফায় ৩ শতাধিক বস্তা চাল, পাঁচ শতাধিক লিটার ভোজ্য তেলের বোতল,চিনি জব্দ করে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৫ এর সিআইসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মুশফিকুর রহিম জব্দকৃত মালামালগুলো বাজেয়াপ্ত করেন বলে জানা গেছে। আটক সিএনজি অটোরিকশা ২টি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শাহপরী হাইওয়ে পুলিশের নিকট সোপর্দ্দ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

এপিবিএন এসপি বলেন, অবৈধভাবে ত্রাণের মালামাল কিনে তা ক্রয় বিক্রয় করছিল একটি চক্র। এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় চোরাকারবারীরা পালিয়ে যায়। রোহিঙ্গা ও স্হানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাদের চাহিদার অতিরিক্ত ত্রাণ সামগ্রী অপেক্ষাকৃত কম দামে সংগ্রহ করে তা ক্যাম্পের বাইরে অবৈধভাবে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটের গুদামগুলোতে সরবরাহ করে আসছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn