খেতে সুস্বাদু, অধিকতর মিষ্টি ও ভেতরে গাঢ় লাল ও হলুদ বর্ণের পৃথক দুটি উন্নত জাতের পেঁপের জাত উদ্ভাবন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভাবিত জাতটি সারা দেশে চাষাবাদের জন্য বীজবোর্ডের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। জাত দুটির নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের গবেষক অধ্যাপক নাসরীন আক্তার আইভী ৫ বছরের অধিক সময় গবেষণা করে নতুন এ দু জাতের পেঁপে উদ্ভাবন করেছেন। চারা লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল আসবে। এ জাতের পেঁপেতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। উদ্ভাবিত জাতের পেঁপে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী।
উদ্ভাবক অধ্যাপক নাসরীন আক্তার আইভী বলেন, পেঁপে একটি পরপরাগায়িত ফল। পেঁপের ৩২ লিঙ্গের গাছ থাকলেও পুরুষ, স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের গাছই পাওয়া যায়। এদের মধ্যে আমরা শুধু স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের পেঁপের জাত উন্নয়নে কাজ করছি। স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের পেঁপে গাছে ফল ধরে। উভয়লিঙ্গ গাছের ফল লম্বাটে হয়। প্রতিটি গাছে ৫০-৬০ টি ফল হয় এবং প্রতিটি পেঁপের ওজন হয় ১.৫-৩.৫ কেজি।
তিনি বলেন, উদ্ভাবিত জাতের পেঁপে ফলন ও পুষ্টিমান বেশি হবে। পেঁপের জাত দুইটি গাইনাডোইওসিয়াস ধরনের স্ত্রী ও উভয়লিঙ্গ বিশিষ্ট গাছ থাকবে। প্রতিটি গাছেই ফল ধরবে। প্রতিটি গাছে ৫০-৬০ টি ফল হয়। স্ত্রী গাছের ফলের আকার নাশপাতি আকারের এবং গায়ে লম্বালম্বি দাগ আছে। ফলন হয় হেক্টর প্রতি ৬০-৭০ টন, এ জাতের পেঁপেতে পেপেইন নিঃসরণ বেশি হয়। পাকা ফলের মিষ্টতা বেশি, পাকা ফলের ভেতরের রং একটিতে গাঢ় হলুদ থেকে গাঢ় কমলা রঙের, অপরটিতে লাল রংয়ের। পাকা পেঁপেতে যেমন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি থাকে তেমনি কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে পেপেইন নামক এক প্রকার হজমকারী দ্রব্য। যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও খুব উপকারী। কাঁচা পেপে সবজি হিসাবেও খাওয়া যায়।
গবেষক বলেন, বাণিজ্যিকভাবে চাষের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের চাষীগণ পরপরাগায়িত বীজ ব্যবহার করেন। সাধারণ পেঁপের বীজ থেকে উৎপাদিত চারার ৫০ ভাগই পুরম্নষ গাছ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা থেকে কোন ফল পাওয়া যায় না। তাই অধিক ফলবান গাছ পাওয়ার আশায় পেঁপে চাষীগণ এক্ষেত্রে প্রতি মাদায় বা ভিটে ৩-৪টি চারা একত্রে রোপণ করে থাকেন। ফুল আসার পর পুরুষ গাছ কেটে বাদ দেয়ার পরে জমিতে রাখা হয় শুধু স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের গাছ। পুরুষ গাছ মটি থেকে পুষ্টি ও সার গ্রহণ করায় অন্য গাছেও সার-পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। এতে একদিকে ফলন যেমন অনেক কমে যায় তেমনি উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যায়। চাষীরা যাতে প্রতিটি মাদায় ১টি মাত্র চারা রোপণ করে রোপণ সব চারাতেই ফল পান এবং ফলন ও পুষ্টিমান বেশি হয়- এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে উদ্ভাবন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া বলেন, এ পেঁপে কৃষি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এবং আমাদের দেহের পুষ্টি তথা স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পুষ্টিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। পুষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের পেঁপের এ জাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।