২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১০:২৩
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১০:২৩

০ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন শতবর্ষী মা

হারিয়ে যাওয়ার ৭০ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন শতবর্ষী মা মঙ্গলের নেছা। ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যায় একমাত্র ছেলে কুদ্দুছ মিয়া। এরপর থেকে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মা। শনিবার সে স্বপ্ন পূরণ হলো তার। হারিয়ে যাওয়া ১০ বছরের শিশু কুদ্দুছ এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধ। দীর্ঘ ৭০ বছর পর ফিরে পেলেন একমাত্র ছেলে কুদ্দুছ মিয়াকে।

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামে ঝরনা বেগমের বাড়িতে মা ছেলের এই দেখা হয়। ছেলেকে ফিরে পেয়ে ১০২ বছর বয়সী মা আবেগে আপ্লুত হয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলেও মাকে ফিরে পেয়ে মাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। এই দৃশ্য দেখতে কয়েক গ্রামের মানুষ ভিড় করেন।

শতবর্ষী মা বিলাপ করে বলেন, ‘কুদ্দুছ তুই একদিন ফিরে আসবি এটা আমি বিশ্বাস করতাম, আল্লার কাছে এই দোয়াই করেছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।’

জানা যায়, কুদ্দুছের বাবা মারা গেলে তার মা মঙ্গলের নেছা ১০ বছর বয়সে পাশের বাড়ির জামাতা পুলিশ সদস্য আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে রাজশাহী জেলার বাঘমারা উপজেলায় পাঠায়। সেখানে গিয়ে কুদ্দুছ হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে আর খুঁজে পায়নি আউয়াল মিয়া। পরে কুদ্দুছকে একই উপজেলার সিংশাইর গ্রামের সাদেক মিয়ার স্ত্রী তাকে লালন-পালন করেন। পরে ৩০ বছরে বয়সে বাগমারা উপজেলার সবেদ মিয়ার মেয়ে শুরুজ্জাহানকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতেই বসবাস করতে থাকেন। 

গত ১২ এপ্রিল রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার সিংশাইর গ্রামের এমকে আইয়ূব নামক এক ব্যক্তি ফেসবুকে কুদ্দুছ মিয়ার হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একটি ভিডিও আপলোড করেন। এরপর ভিডিওটি ভাইরাল হলে ৫ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কয়েকজন যোগাযোগ করেন আইয়ূবের সঙ্গে। তারা কুদ্দুছ মিয়াকে তার মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দেন। এরপর আজ শনিবার দেখা করেন শতবর্ষী মা ও ছেলে।

কুদ্দুছ মিয়া বলেন, হারিয়ে যাওয়ার পর রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার সিংশারা গ্রামের সাদিক মিয়ার স্ত্রী আমাকে ছেলের মত লালন-পালন করেন পরবর্তীতে বিয়ের পর আমার শ্বশুরবাড়িতেই থাকছি। কিন্তু মনে মনে আমার মা ও বোনদের খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল একদিন আমার মার সন্ধান আমি পাবো। মায়ের বুকে ফিরতে পেরে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। বাকি জীবনটা মার সঙ্গেই থাকবো।

সফিকুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে আমরা কয়েকজন রাজশাহীতে যোগাযোগ করি ও সেখানে যাই। মা ছেলের মধ্যে ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দেই। ছেলের হাতের কাটা দাগ আছে এমন কথা কলার পর আমরা মিলিয়ে দেখি এবং তাকে আজ মায়ের কাছে নিয়ে এসেছি।

এমকে আইয়ূব জানান, ‘কুদ্দুছ মুন্সি হারিয়ে যাওয়ার গল্প শুনে আমি আমার ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করি। সে ভিডিও সূত্র ধরে কুদ্দুছ মিয়ার বাড়ির কিছু লোকজন আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং হাতের কাটা দেখে তাকে শনাক্ত করে। আমার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে ৭০ বছর পর মা তার ছেলেকে ফিরে পেয়েছে, তাতে আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে।’

কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে হাফেজ সোহেল মুন্সি জানান, ‘কোনদিন ভাবিনি আমার দাদীকে দেখতে পাবো। আমার বাবা তার মাকে ফিরে পাবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছে, আল্লার কাছে শুকরিয়া।’ 

কুদ্দুছ মিয়ার বোন ঝরনা বেগম জানান, ‘আমার মা সবসময় বলতেন একদিন আমার ছেলে ফিরে আসবে। আল্লাহ আমার মার ডাক কবুল করেছেন। আমরা আমার ভাইকে ফিরে পেয়েছি’

Facebook
Twitter
LinkedIn