বন্দর নগরী চট্টগ্রামে উন্নয়নের নানা কর্মযজ্ঞে খোলা নালাগুলো যেন এক একটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। নালায় পড়ে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না। সোমবার রাতে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় নালায় পড়ে গিয়ে নিখোঁজের পাঁচ ঘণ্টা পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সেহরিন মাহমুদ সাদিয়ার (২০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখন এই মৃত্যুর দায় কে নেবে সে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে জনমনে। নালাগুলো দেখভালের দায়িত্বে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমন্বয়হীনতাকে এজন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম নগরীতে করপোরেশনসহ যেসব সেবা প্রতিষ্ঠান উন্নয়নকাজ করছে তাদের সবার মধ্যে সমন্বয় না হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটবে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ের অদূরে মাজার গেটের কাছে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটার সময় সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নালায় পড়ে যান সেহরিন মাহমুদ সাদিয়া। সাদিয়া সে সময় চশমা কিনে আগ্রাবাদ এলাকা থেকে মামার সাথে হালিশহর বড়পুলের বাসায় ফিরছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাদিয়া পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার মামাও ড্রেনে ঝাঁপ দিয়ে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। পরে প্রত্যক্ষদর্শীরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসে ঘটনাস্থলে তাকে উদ্ধারে অভিযান চালায়। ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের দু’টি ক্রেন দিয়ে প্রায় এক টন আবর্জনা অপসারণের পর মিলে তার নিষ্প্রাণ দেহ। নিখোঁজের পাঁচ ঘণ্টা পর গভীর রাত ৩টায় দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে আগ্রাবাদ ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়েই নালার ঢাকনা খোলা থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ইতঃপূর্বে গেল সপ্তাহে চাক্তাই এলাকায় নালায় পড়ে মারা যায় এক ভবঘুরে। এর আগে ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে গত ২৫ আগস্ট সকালে মুরাদপুর এলাকায় খালে পড়ে তলিয়ে যান সালেহ আহমদ নামে এক সবজি ব্যবসায়ী। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি।
চলতি বছরের ৩০ জুন জলাবদ্ধতায় নগরীর ষোলশহর চশমা হিল এলাকায় খালের পাশের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় খালে পড়ে যায় একটি অটোরিকশা। ¯্রােত থাকায় খালে তলিয়ে মারা যান চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগম (৬৫)।
এ দিকে নগরীর আগ্রাবাদে নালায় পড়ে তরুণী সাদিয়া আকতার নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিটি মেয়র মো: রেজাউল করিম চৌধুরী। পরিদর্শনকালে মেয়র বলেন, আধুনিক নগর গড়তে উন্নয়ন করতে হবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেইই করুক, এ কারণে নাগরিক দুর্ভোগ ও ভোগান্তি হবে এটা প্রত্যাশিত না। চট্টগ্রাম নগরীতে করপোরেশনসহ যেসব সেবা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কাজ করছে তাদের সবার মধ্যে সমন্বয় না হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটবে। তিনি সাদিয়া আকতারের মৃত্যুর ঘটনাকে অনাকাক্সিক্ষত বলে উল্লেখ করে এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
মেয়র এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আগ্রাবাদ হতে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক অবিলম্বে সংস্কার করে জনদুর্র্ভোগ লাঘব করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন। তিনি এ ব্যাপারে করপোরেশনের পক্ষ থেকে চউককে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে উল্লেখ করেন। এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সিদ্দিক ও ফরহাদুল আলম মেয়রের সাথে ছিলেন।