যখনই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে ও বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আরমগীর।
শনিবার ইঞ্জিনিয়ারর্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশে সর্বশেষ নিরপেক্ষ ও জনগণের অংশগ্রহণ মূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই দিবসটিতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আবশ্যকতাকে তুলে ধরার জন্য এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কোনো সাধারণ নেতা নন। ১৯৮১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন শাহাদাতবরণ করলেন, তখন তিনি এই দেশের প্রয়োজনে গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে এলেন। তিনি স্বাধীনতা সার্বোভৌমত্বের পতাকার হাল ধরলেন, তিনি হাল ধরলেন বিএনপির। যেই দলের প্রতিষ্ঠাতা একদলীয় শাসন থেকে দেশে বহুদলীয় শাসন চালু করেছিলেন খালেদা জিয়া সেই দলের পতাকা হাতে তুলে নিলেন, গণতন্ত্রের পতাকা হাতে তুলে নিলেন।’
বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন। তিনি সেই সংগ্রামে সবাইকে সাথে নিয়ে জয়লাভ করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, ১৯৯১ সালে। তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। আগের রাতে ভোট চুরি করে প্রধানমন্ত্রী হননি। জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। যখনই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে হয়েছেন। জনগণের ভালোবাসা নিয়ে সোজা পথে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘বাঁকা পথ তো আপনারা নেন, পেছনের দরজা দিয়ে তো আপনারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আসেন। আপনারা মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের অবৈধ সরকারের সাথে আঁতাত করে ক্ষমতায় এসেছেন। তাদের সাথে আঁতাত করেই এখনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি করছেন। এটা এদেশের জনগণ জানেন।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘আজকে বিএনপিকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দী করে রেখেছেন। আমাদের নেতা, ভবিষ্যৎ তারেক রহমান তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছেন। ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। আপনাদের এত ভয় যে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীকেও আপনারা মামলা দেন। তারপরও আপনারা বলেন, গণতন্ত্রের কথা, আপনারা বলেন, সোজা পথের কথা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আদালতকে ব্যবহার করে আপনারা এই শাসনকে টিকিয়ে রেখেছেন। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, ‘আপনারা ইতোমধ্যে এদেশের সর্বনাশ করেছেন। অর্থনীতির সর্বনাশ করেছেন, মেঘা প্রজেক্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। সাধারণ মানুষ গরীব থেকে আরো গরীব হচ্ছে। আর আপনারা বড় লোক থেকে বড় লোক হচ্ছেন। আপনাদের আমলে ক্যাসিনো সম্রাট, এমনকি করোনার সময়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সেখানেও আপনারা দুর্নীতি করতে দ্বিধা করেননি। আপনারা করোনার টিকা নিয়ে পর্যন্ত দুর্নীতি করেছেন। পদে পদে সব জায়গায় আপনারা দুর্নীতি করছেন। পুরো দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা আবার চেষ্টা করছেন- ওই রকম একটা নির্বাচন দিয়ে আবার ক্ষমতায় আসবেন। যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। আপনারা ইভিএম চালু করেছেন। এটা ভোট চুরির একটা বড় হাতিয়ার। মজার ব্যাপার হচ্ছে- প্রধান নির্বাচন কমিশনার হুদা সাহেব, যিনি পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তিনিও বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলেচনা করেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। যাওয়ার সময় হয়েছে তো। এখন তো আর আগের মতো নিরাপত্তা পাবে না। আবার কয়েকদিন আগে তিনি রাশিয়াতে গিয়ে নির্বাচন পদ্ধতি দেখে এসেছেন। রাশিয়ার একই অবস্থা। ওটা আরো মজার জিনিস। একবার প্রধানমন্ত্রী হয় আরেকবার প্রেসিডেন্ট।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেছেন- বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও পার্টি। আরে হরতাল জ্বালাও-পোড়াও করে আপনাদের তো কেউ অতিক্রম করতে পারবে না। আপনারা বরাবরই সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় এসেছেন। সন্ত্রাসের মাধ্যমেই আপনারা ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের পর থেকে পরিকল্পিতভাবে আপনারা প্রথমে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিচারপতি খায়রুল হকের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন। এমকি আপনারা গণমাধ্যমকেও নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন। ফলে আজকে গোটা জাতি কথা বলতে পারছে না। তাদের মতামত দিতে পারছে না। আমরা প্রজাতন্ত্রের যারা সাধারণ মানুষ তারা একটা দিন রাজা হই, যেদিন আমরা ভোট দিতে পারি। কিন্তু সেই ভোটের অধিকারটুকু আওয়ামী লীগ কেড়ে নিয়ে গেছে। এখন কেউ ভোট দিতে যেতে পারে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১ অক্টোবর ছিল একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচলানায় সর্বশেষ নির্বাচন। সেটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করেছিল। জনগণ সেখানে অংশগ্রহণ করেছিল, ভোট দিয়েছিল। ভোটাররা নির্ভয়ে যার ভোট যাকে ইচ্ছে তাকে দিয়েছিল। আমরা এই দিনটা এই জন্য পালন করছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন- এই অনুষ্ঠানটা হওয়ার কথা ছিল প্রেসক্লাবে। কিন্তু তারা হঠাৎ করে বললো তারা এই অনুষ্ঠান সেখানে করতে দিতে পারবে না। ইদানিং বেশিরভাগ বিএনপির অনুষ্ঠান সেখানে বাতিল করা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে- ঢাকা মহানগরের অনুষ্ঠানে একজন সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছিল। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সময়টা অতিক্রম করতে হলে আমাদের অত্যন্ত কৌশলে কাজ করতে হবে। ছোটখাটো ঘটনা করে আসল ঘটনাকে বিনষ্ট করা যাবে না। এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে।’
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞানি দিলারা চৌধুরী দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: মোরতাজুল করিম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্র দলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।