পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রায় ৫৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়েছে।
কোম্পানির তথ্য মতে, চুক্তি অনুসারে বিদেশি এই কোম্পানির ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ শেষ করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি বহুজাতিক কোম্পানি সানোফি বাংলাদেশের ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের লক্ষ্যে বেক্সিমকো ফার্মা ও সানোফির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আট মাস পর শেয়ার অধিগ্রহণের কাজ শেষ করেছে বেক্সিমকো ফার্মা।
বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে শেয়ার অধিগ্রহণ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান শাহ মো. ইমদাদুল হক এবং উভয় কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শেয়ার অধিগ্রহণের খবরে ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারের দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার শেয়ারটির দাম ৫ টাকা বেড়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৫৮ সালে ‘মে অ্যান্ড বেকার’ নামে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে সানোফি। বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে ২০১৯ সালের অক্টোবরে ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি। সেই ঘোষণার ১৪ মাস পর শেয়ার হস্তান্তরের জন্য বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠানটি।
শুরু থেকেই বাংলাদেশে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে সানোফি। গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি অত্যাধুনিক ওষুধ তৈরির কারখানা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ভ্যাকসিন, ইনসুলিন ও কেমোথেরাপির নানা ওষুধ বাংলাদেশে আমদানি করে সানোফি। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, টিউমার চিকিৎসা, চর্মরোগ ও সিএনএসে সানোফির ওষুধ বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। কোম্পানিটির বহুল প্রচলিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে লান্টাস, এপিড্রা, ফিমোক্সিল, ফ্লাজিল, এভিল ও এন্টারোজারমিন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দীর্ঘ ছয় দশকের এ পথচলায় বেশ কয়েকবার নাম বদল করেছে বাংলাদেশে সানোফির এই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। ২০০৪ সালে তিনটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অ্যাভেন্টিস বাংলাদেশ লিমিটেড, ফাইসন্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড এবং হোয়েস্ট বাংলাদেশ ম্যারিয়ন রোজেল লিমিটেড একীভূত হয়ে সানোফি-অ্যাভেন্টিস বাংলাদেশ নাম নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ২০১৩ সালে কোম্পানিটির নাম বদলে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড রাখা হয়।
দেশের ওষুধ শিল্পে একটি আস্থাশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসা চালিয়ে এলেও ২০১৯ সালে হঠাৎ বাংলাদেশ ছাড়ার ঘোষণা দেয় সানোফি। তখন থেকেই মালিকানা হস্তান্তরের জন্য সানোফি এমন একটি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের সন্ধানে ছিল, যারা নৈতিক এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সানোফির পণ্য প্রচারে প্রতিষ্ঠানটির সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারা দীর্ঘ সময়ের জন্য সমুন্নত রাখতে পারবে এবং পাশাপাশি রোগী ও সানোফি বাংলাদেশের কর্মীদের কল্যাণে কাজ করে যাবে। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই অংশীদার হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাকে বেছে নিল তারা।
চুক্তির আওতায় বেক্সিমকো ফার্মা তাদের টঙ্গীর কারখানার কাছে ২৫ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত পিআইসি/এস অনুমোদনযোগ্য একটি সেফালোস্পিরিন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির কারখানাসহ অন্যান্য ওষুধ তৈরির কারখানার মালিকানা পাবে। সানোফির ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে বিপণনের ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার সুনিশ্চিত হবে এ চুক্তির মাধ্যমে। সানোফির সুষম ও ক্রমবর্ধমান পোর্টফোলিও বেক্সিমকোর বর্তমান পোর্টফোলিওকে আরও শক্তিশালী ও প্রসারিত করবে, যা ভবিষ্যতে কোম্পানির বিকাশ, সহজলভ্য ওষুধ ও অত্যাধুনিক চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিকে জোরদার করবে।
উল্লেখ্য, বেক্সিমকো ফার্মা দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াসহ বর্তমানে বেক্সিমকো ফার্মা বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করে। বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয় এবং এর জিডিআর শেয়ার লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।