ডালিম একটি পাতাঝরা চিরহরিৎ বৃক্ষ। গাছ ১০ থেকে ১৫ ফুট লম্বা হয় এবং কাঠ ফিকে পীত বর্ণের অল্প কালো দাগ যুক্ত যার ভিতর শক্ত। শাখা প্রশাখা গুলো গোলাকার। পাতা সাধারণত দুই থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা এবং উভয় দিক সরু এবং উপরিভাগ চকচকে মসৃণ। ফুল ভেদে ডালিম কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক প্রকার গাছে শুধুমাত্র পুং ফুল ফোটে অন্যটিতে পুং এবং স্ত্রী দু’প্রকার ফুলই ফোটে। ডালিম ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ এবং লাল হয়। ফলের ভেতরে বীজের কোষ হয় এবং কোষের উপর পাতলা আবরণ থাকে। পাকা ফলে বীজ গোলাপি ও সাদা হয়। সাধারণত মে মাসে ফুল ও আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে। তিন প্রকার স্বাদের ডালিম দেখা যায় যথা, মিষ্টি, টক মিষ্টি ও অম্লরস। দেশ ভেদে ডালিমের আকৃতি ও স্বাদের পার্থক্য দেখা যায়। ডালিমের আদি জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ মনে করেন ডালিমের আদিনিবাস ভারতবর্ষ, অনেকে মনে করেন ডালিমের উৎপত্তিস্থল ইরান।
প্রাপ্তিস্থানঃ বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলাতে ডালিম পাওয়া যায়। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং পাকিস্তান, আফগানিস্থান, ইরান ও আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডালিম জন্মে।
চাষাবাদঃ সাধারণত গুটি কলম মাধ্যমে এর চারা তৈরি করা হয়। বীজ থেকে তৈরি চারার গুণগত মান ঠিক থাকেনা। এক বছর বয়সী কচি ডালে সাধারণত কলম করা হয়। কলমের গাছে ১-২ বছরের মধ্যে ফল ধরে এবং বীজের গাছে ফল ধরতে ৪-৫ বছর সময় লাগে।
লাগানোর দূরত্বঃ ১২ থেকে ১৫ ফুট দূরত্বে ডালিমের চারা রোপণ করতে হয়।
উপযোগী মাটিঃ সব ধরনের মাটিতে ডালিম জন্মে। তবে বেলে, দোআঁশ ও পলি মাটিতে ভালো হয়।
বীজ আহরণঃ আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকলে তা থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয় যায়।
প্রতি কেজিতে বীজের পরিমাণঃ প্রায় ৪-৬ হাজার।
প্রক্রিয়াজাতকরণ/সংরক্ষণঃ বীজ থেকে চারা তৈরি হয়। গুটি কলম ও শক্ত ডালের কাটিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করলে মাতৃগুণ অক্ষুন্ন থাকে। ফল ছিদ্রকারী পোকার হাত থেকে বাঁচতে কচি ফল পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।
ব্যবহার্য অংশঃ ডালিমের ফুল, ফল, রস, বীজ, ফলের ও গাছের ছাল এবং পাতা ব্যবহার হয়।
উপকারিতা/লোকজ ব্যবহারঃ ডালিম রক্ত উৎপন্ন করে এবং হৃদপিণ্ড ও লিভারের শক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকরী। ডালিম ক্ষুধাবর্ধক, হৃদকম্প নিবারক, স্বর পরিষ্কারক, মূত্র প্রবাহক, পিপাসা নাশক, শক্তি বর্ধক, আমাশয় নিবারক ও পুষ্টিকারক। মিষ্টি ডালিম হতে টক ডালিমে মুত্র প্রবাহক শক্তি বেশি।
কোন অংশ কিভাবে ব্যবহৃত হয়ঃ
- মিষ্টি ডালিমের রস নিয়মিত কিছুদিন খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিপায় এবং শারীরিক দুর্বলতায় উপকারী।
- ডালিম গাছের শিকড়, ছাল ও ফলের খোসা আমাশয় ও পেটের অসুখ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
- কুষ্ঠরোগ উপশমে এ ফলের রস ব্যবহার করা হয়।
পরিপক্ক হওয়ার সময়কালঃ সাধারণতঃ ৪-৫ বছরে পরিপক্ক হয়।
অন্যান্য ব্যবহারঃ কাপড় রং করার জন্য ডালিমের ছাল ব্যবহার করা হয়।
আয়ঃ প্রতি একর জমিতে বার্ষিক ৬০,০০০ টাকা থেকে ৭০,০০০ টাকা আয় করা সম্ভব।