আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ত্রিমুখী লড়াই বেশ জমজমাট । প্রার্থীর বৈধতা ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রচারণার সরকারি ডিক্লেয়ারেশন পাওয়া মাত্র হয়ত শুরু হবে নির্বাচনী ক্যাম্পেন, মিছিল, মিটিং, পোষ্টারিংসহ অন্যান্য প্রচারণা। অদ্য এলাকার পরিচিত মুখ যারা এবার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন, বেশির ভাগ পদপ্রার্থীই দেখা যাচ্ছে স্বতন্ত্র থেকে নোমিনেশন পাওয়া । যারা প্রায় চার-পাঁচ মাস আগ থেকেই শুরু করেছেন গ্রামে গ্রামে স্থানীয়ভাষায় যাকে বলে উঠান বৈঠক বা মতবিনিময় সভা । এই বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য আসন্ন নির্বাচনে গ্রামবাসীর কাছে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরা ।
জাতীয় পর্যায়ে দলীয়ভাবে নির্বাচন নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত না আসায়, বিএনপির কোন প্রার্থীর খবর এখনও পাওয়া যায়নি । তবে নোমিনেশনের পূর্বে আওয়ামীলীগের নৌকা মার্কা প্রত্যাশী পদপ্রার্থী ছিলেন দুইজন । নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগেই নোমিনেশন নিয়ে ১২ নং পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সন্মানিত ভোটারগণ পাঁচ-পাঁচবারের নির্বাচিত মেম্বার আব্দুল মন্নাফ ও তরুন প্রজন্মের জনপ্রিয় নেতা, যুবসমাজের প্রাণ, সাধারণ সম্পাদক আবু মোঃ নাসির উদ্দিনের ভেতর পদপ্রার্থীতার এক মৌণ লড়াই লক্ষ করেন । দু’জনই আওয়ামিলীগের দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে মনোনয়োন (নোনিনেশন) ফরম জমা দেন । ২৬ অক্টোবর জানা যায়, আব্দুল মন্নাফ হচ্ছেন আওয়ামিলীগের নৌকা মার্কা প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী । কিন্তু যুবলীগকে এলাকায় সুসংগঠিত করা ও বিগত কয়েকমাস ধরে একজন পদপ্রার্থী হয়ে আওয়ামিলীগ নিয়ে বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও সভায় উপস্থিত থেকে কঠিন ধৈর্য্যের পরিচয় দেয়া আবু মোঃ নাসির উদ্দিন দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজের ফেসবুকে এলাকাবাসীকে জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নিবেন না । দলীয় মনোনীত পদপ্রার্থী ও নৌকার জন্য দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই তিনি আছেন ।
আব্দুল মন্নাফ রাজনৈতিক বর্ষীয়ান নেতা । নৌকার প্রতীকের এই মানুষটির গ্রাম্য সালিশি বৈঠক বিচার মিমাংসায় যথেষ্ঠ সুনামের পরিচয় পাওয়া যায়। যে কারণে উনাকে সবাই বলেন ৫ বারের মেম্বার । আসন্ন নির্বাচনে নিজের যোগ্যতার মূল্যায়নকল্পে নৌকার মাধ্যমে চেয়ারম্যান হতে পারলে এলাকার জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবেন, নোমিনেশন পাওয়ার পর জনসংযোগ কাজে এখন থেকেই বিষয়টা আব্দুল মন্নাফের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলা চলে ।কেননা স্বতন্ত্র থেকে যারাই এবার আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিবেন, প্রত্যেকের নামের পাশেই কিন্তু আছে অভিজ্ঞতার ফুলঝুরি । কানিকিয়ারি গ্রামের অধিবাসী আব্দুল মন্নাফ এগিয়ে যাবেন । নৌকার বৈঠায় দাড় বেয়ে, উন্নয়নের আগামীতে, গ্রামবাসীর কাছে যার এই প্রত্যাশা ।
পৃথিমপাশা গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যান নবাব আলী বাখর খান হাসনাইন । নবাব পরিবারের সুনামপুষ্ট এই নেতা বরাবরের মত এবারও দাঁড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র থেকে । এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে । গ্রামের মানুষের কাছে একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত । সহজ সরল মানুষটির গতবারের প্রতীকও ছিলো চশমা মার্কা। এলাকার কোন সালিশি এলাকাতেই মেটানোর মত জ্ঞানদৃষ্টিসম্পুন্ন মানুষ হাসনাইন সাহেব। গ্রামবাসীর জন্য ব্যক্তিগত কোন অবদানের কথা শোনা না গেলেও, উনার সময়েই অন্যান্যদের তুলনায় এই ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের উন্নয়নই বেশি দেখা গেছে। প্রতিদ্বন্দী সবার সাথেই এই হাসিখুসি মানুষটির আন্তরিকতা রয়েছে শতভাগ। সাদা মনের মানুষের পুনরায় চেয়ারম্যান হওয়ার যে স্বপ্ন, সেটাও এখন গ্রামবাসীর ইচ্ছের ওপর অপেক্ষা করবে শতভাগ ।
আনারস মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতায় সরব আছেন বরাবরের মত বাম দলের সিনিয়র নেতা মোঃ আব্দুল লতিফ । তবে নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে । আগেও ২ কিস্তিতে তিনি পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন । উনার উল্লেখযোগ্য অবদানের ফিরিস্তি খুব ভালো । ২ টি প্রাইমারি স্কুল, ৩ টি হাইস্কুল (৮ম শ্রেনি অবধি একটি স্কুল এমপিওভুক্ত, বাকি দুটি ননএমপিওভুক্ত) ১টি কলেজ, এমনকি ৩ টি সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক উনার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত । রাজনৈতিক বর্ষীয়ান এই নেতাও অন্য সবার মতই রাজনৈতিক গনসংযোগে ব্যস্ত আছেন । একজন শিক্ষানুরাগী ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব হিসেবেও সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল লতিফের যথেষ্ট সুনাম আছে । জনতার ভালোবাসায় তৃতীয় বারের মত বিজয়ের মালা তুলে নিতে অভিজ্ঞ এই নেতার রয়েছে আন্তরিক ব্যবহার। সবার ভালোসায় তিনিও জয়ের জন্য আশাবাদী।
জিমিউর রহমান চৌধুরী ফুলমিয়া আছেন সিএনজি মার্কা নিয়ে । উনিও স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী । এবং গতবারও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন । জিমিউর রহমান চৌধুরী ফুলমিয়ারও এলাকায় সুনাম আছে । একজন সমাজ সেবক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে বিভিন্ন পদকপ্রাপ্ত এই মানুষটি আর্থিক অসচ্ছল নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় । হয়ত সে কারণে সুলতানপুর গ্রামের এই প্রতিদ্বন্দীর বেশি প্রচারণার প্রয়োজন হবে না । গ্রামের মানুষের উন্নয়নের অংশীদার হতেই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জিমিউর রহমান চৌধুরী ফুলমিয়াও এলাকাবাসীর কাছে একটি বারের জন্য সুযোগ চান ।
এখন কথা হলো- ভোট সরকারদলীয় ও স্বতন্ত্র সব পদপ্রার্থীই চাইবেন । এক্ষেত্রে গ্রামবাসী এখন খুবই সচেতন । রাস্তাঘাট-দোকানপাট-বাজার-ঘরবাড়িতে পুরুষরা যেমন আসন্ন নির্বাচনী আলোচনায় ব্যস্ত । প্রতিটি গ্রামের মহিলারাও বসে নেই । সবাই সজাগ আছেন । বুঝে শুনে, যে যার প্রিয় ব্যক্তিত্বকে চেয়ারম্যান পদে ভোট দেবেন । ১২ নং পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ৯ টি কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে বাইশ হাজার ভোটার । ৪১ টি গ্রামের ৯টি ওয়ার্ড্ এর প্রাক নির্বাচনী প্রস্তুতিতে এখনও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি । সামগ্রিকভাবে বলা চলে শান্তিময় পরিবেশ বজায় আছে । এলাকার সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়ার আশা আকাঙ্খায় এমন একজন প্রিয় মুখ হয়ত অত্র আসনে জয়ী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন । বরাবরের মতন যার হাত ধরে বাস্তবায়ন ঘটবে দলমত নির্বিশেষে পৃথিমপাশা ইউনিয়নবাসীর স্বপ্নপূরণের অংগীকার । সবার চাওয়া। একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠ নির্বাচন ।
মারুফ আহমেদ (বিশেষ প্রতিনিধি)