শীতের সবজি আসতে থাকায় সচরাচর বছরের এ সময়টায় বাজারে ওইসব পণ্যের দাম একটু চড়াই থাকে। দামের উত্তাপের কারণে অনেকের পক্ষেই শুরুর দিকে শীতকালীন সবজির স্বাদ নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এবার যেন সেই দামের আগুনে ঘি পড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাবে সবজির বাজারও অনেকটাই চড়ে গেছে। শুধু মৌসুমি নয়, সব ধরনের শাকসবজির দামই এখন ক্রেতার পকেট খালি করে দিচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ-অভিযোগের অন্ত নেই।
ক্রেতার মতো অভিযোগ কিছু কম নয় বিক্রেতাদেরও। তাদের দাবি, সবজির দাম বেড়েছে পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায়। আর ট্রাকের ভাড়া বেড়েছে ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে। গত দুই-তিন দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দাম বাজার ভেদে বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন।
কয়েকজন সবজি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, যে হারে ট্রাকের ভাড়া বেড়েছে, তাতে সবজির দাম না বাড়ালে তাদের লোকসান গুনতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, তেজকুনিপাড়াসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বাড়তি। কিছু সবজি প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া গেলেও বেশিরভাগের দাম ৬০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত।
গত বুধবার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকেন ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিকরা। গত সোমবার রাতে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৩০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন পরিবহন নেতারা। ভাড়া বাড়ানোর আশ্বাসে রাতেই ধর্মঘট স্থগিত করা হয়। মঙ্গলবার থেকে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক হলেও বাজার পরিস্থিতি অস্বাভাবিকই রয়ে গেছে।
গতকাল তেজকুনিপাড়া বাজারে সবজি কিনছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিব হোসেন। সমকালকে তিনি বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়তি। ৬০ থেকে ৭০ টাকার কমে কোনো সবজি পাওয়া যায় না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবজি, চাল-ডাল সব কিছুতেই যেন আগুন। যে যার ইচ্ছা মতো দাম বাড়াচ্ছে। ফলে আমাদের মতো মানুষের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
দুই-তিন দিন আগে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে গতকাল মঙ্গলবার সেই ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি মুলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা এতদিন বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। ৪০ টাকা কেজির ধুন্দলের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। কয়েক দিন আগে প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এখন ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। দুই-তিন দিন আগেও ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যেত বেগুন ও বরবটি। গতকাল বিক্রেতারা এই সবজি দুটির দাম রাখেন কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।
এ ছাড়া ১০০ টাকার ওপরে রয়েছে কয়েকটি শীতের সবজির দাম। এক কেজি নতুন আলুর দাম রাখা হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। বাজারে যথেষ্ট পরিমাণে নতুন আলু এলেও এর প্রভাব দেখা যায়নি পুরোনো আলুর দামে। আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে এসেছে কলিসহ নতুন পেঁয়াজ, যা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। ৯০ থেকে ১০০ টাকার শিম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০/১২০ টাকায়। দাম বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের শাকেরও। লালশাক ও পালংশাকের আঁটি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
হাতিরপুল বাজারের একজন খুচরা বিক্রেতা সমকালকে বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে এনে বিক্রি করেন তিনি। পাইকারিতে সব ধরনের সবজি কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। এ কারণে খুচরা পর্যায়েও দাম বেশি নিতে হচ্ছে।
কুষ্টিয়া, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে কারওয়ান বাজারে পাইকারি দরে সবজি বিক্রি করেন মোরশেদ আলম। সমকালকে বলেন, ট্রাকের ভাড়া বাবদ খরচ আগের চেয়ে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বেড়েছে তার। এ কারণে তিনি দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
সাভার ও গাজীপুর থেকে কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে বিক্রির জন্য প্রতিদিন এক ট্রাক সবজি আনেন দুলাল হোসেন। ট্রাক ভাড়া আগের চেয়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি লাগছে বলে জানান তিনি। গত সোমবার রাতে পাঁচ হাজার টাকার জায়গায় তাকে ছয় হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। এ ছাড়া পণ্য বাজারে আনা পর্যন্ত আরও খরচ তো রয়েছেই।
লোকসান ঠেকাতে পণ্যবাহী যানবাহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন কয়েকজন ট্রাক মালিক। তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে কথা হয় ট্রাক মালিক গোলাম রাব্বানির সঙ্গে। তিনি জানান, সাভার, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ীতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সবজি বহন করে আনেন তিনি। তেলের দাম বাড়ার কারণে প্রতি ট্রাকের ভাড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়িয়েছেন বলে দাবি করেন এই ট্রাক মালিক।